আলীকদমে সরকারি অনুদান আত্মসাৎ ও মদ্যপ অবস্থায় ক্লাসে আসার অভিযোগ: হেনস্তার শিকার নারী প্রধান শিক্ষক

আবু জুয়েল নুরখান, আলীকদম প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Dec 25, 2025 - 17:28
 0  3
আলীকদমে সরকারি অনুদান আত্মসাৎ ও মদ্যপ অবস্থায় ক্লাসে আসার অভিযোগ: হেনস্তার শিকার নারী প্রধান শিক্ষক

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা ইউনিয়নে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, মদ্যপ অবস্থায় ক্লাসে পাঠদান এবং বর্তমান নারী প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ইয়াংরিং মাংক্রাত পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক দুই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

অভিযুক্ত দুই সহকারী শিক্ষক হলেন—মমেরি মার্মা ও মংসংছেন মার্মা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে পিটিএ সভাপতি, পাড়া কারবারীসহ ৪৫ জন অভিভাবক অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক মমেরি মার্মা (২০১৭-২০২৩) এবং মংসংছেন মার্মা (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালীন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বিশেষ করে ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের না দিয়ে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের মোবাইল নম্বরে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির জেনপু ম্রো, রিং ইয়ং ম্রো, ফুট ত্রুট ম্রো, তুমরিং ম্রো, রেংলং ম্রো; চতুর্থ শ্রেণির শাবনাও ম্রো এবং পঞ্চম শ্রেণির চেনপাও ম্রো-এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের উপবৃত্তির টাকার ‘পে-রোল বিস্তারিত প্রতিবেদন’ পর্যালোচনায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০২৪ সালে জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের একটি বড় অংশও তারা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যালয়টির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শারমিন আক্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষার পরিবেশ ফিরতে শুরু করলেও অভিযুক্তরা তাকে নানাভাবে হেনস্তা করছেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও পাড়া কারবারী ইয়াংরিং কারবারী বলেন, “অভিযুক্ত শিক্ষক মমেরি মার্মা স্কুল চলাকালীন পাশের পাড়ায় গিয়ে মদ্যপান করেন এবং মদ্যপ অবস্থায় ক্লাসে আসেন। তিনি অফিস কক্ষে বসেই ধূমপান করেন। এসব বিষয়ে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।”

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শারমিন আক্তার বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মমেরি মার্মা আমাকে অফিস ও স্কুলের বাইরে মানসিকভাবে হেনস্তা করছেন। তিনি আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। নিয়মিত স্কুলে না এসেও হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করতে চান। এতে বাধা দিলে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং সম্প্রতি পাহাড়ি পথে স্কুলে আসার সময় আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মমেরি মার্মা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শারমিনের সাথে সাবেক সভাপতি ইয়াংরিং কারবারীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকায় তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব বলছেন।”

এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “ওই বিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে দুজন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিষয়টি সুরাহা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে অন্যান্য অভিযোগগুলো পুরনো।”

অভিভাবকদের দাবি, শারমিন আক্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে এবং লেখাপড়ার মান উন্নত হয়েছে। কিন্তু সাবেক দুই শিক্ষকের অরাজকতায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তারা বর্তমান প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের মতে, দুর্গম এলাকায় নারী শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে এবং কর্মস্থলে এ ধরনের হয়রানি চলতে থাকলে তা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow