অবসর ভাতা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে আগৈলঝাড়ার শিক্ষক মিজানুল হক
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ না পাওয়ায় বিনা চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুল হক।
ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি ড্যামেজসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এই শিক্ষক বর্তমানে অন্ধ অবস্থায় শয্যাশায়ী। তিন বছর আগে অবসরে গিয়েও এখনও পাননি অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের প্রায় ৩০ লাখ টাকার প্রাপ্য অর্থ। ফলে তিনি চিকিৎসা না পেয়ে দিন গুনছেন মৃত্যুর প্রহর।
মিজানুল হকের মেয়ে সামিয়া আক্তারের পল্লবীর বাসায় তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। মেয়ের সামান্য সহযোগিতা, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চলছে ওষুধ ও ডায়ালাইসিস। সামিয়া জানান, “আমার বাবা অবসরের পর থেকেই অসুস্থ। সাধ্যমতো চিকিৎসা করাচ্ছি, কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। অনুরোধ করছি, যেন দ্রুত অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা দেওয়া হয়।”
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, মিজানুল হক স্যার ছিলেন একজন আদর্শবান ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক। তার সততা ও নীরব জীবনযাপনকে পুঁজি করে বিদ্যালয়ের তহবিল সংক্রান্ত একটি ঘটনায় অন্যরা সুবিধা নিলেও দায়ভার পড়েছিল তার ঘাড়ে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “স্যার অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। তার প্রাপ্য অর্থ যদি মৃত্যুর আগেই না পান, তাহলে পরে সেই টাকার আর কোনো মূল্য থাকবে না।”
ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল পাটোয়ারী বলেন, “স্যার আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক। এখন আমাদেরই উচিত তার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো।”
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফারহানা আক্তার বলেন, “মিজানুল হক স্যারের মতো আর কোনো শিক্ষক যেন অবসর-পরবর্তী সময়ে এমন দুর্ভোগের শিকার না হন। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি—অবিলম্বে তার অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ পরিশোধ করা হোক।”
এক সময় মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে যে শিক্ষক অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ আলোকিত করেছেন, আজ সেই শিক্ষক মিজানুল হক মানবিক অবহেলার শিকার হয়ে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে।
What's Your Reaction?
মো: মনিরুজ্জামান আগৈলঝাড়া(বরিশাল) প্রতিনিধি