মাগুরার বিলে অবহেলিত শামুকই এখন শত শত পরিবারের ভাগ্য বদলের হাতিয়ার

বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মাগুরাঃ
Oct 21, 2025 - 13:35
 0  5
মাগুরার বিলে অবহেলিত শামুকই এখন শত শত পরিবারের ভাগ্য বদলের হাতিয়ার

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ বিল ও জলাশয়গুলো এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। একসময় যা কেবল হাঁস-মুরগির খাবার বা জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, সেই বিলের শামুকই এখন অনেকের জীবিকার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। ভোরের আলো ফুটতেই উপজেলার ইছামতি, সিংগের বিল, ও গড়ামারাসহ বিভিন্ন বিলে চোখে পড়ে নৃগোষ্ঠী এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের শামুক সংগ্রহের ব্যস্ত দৃশ্য।

কেউ কোমর পানিতে নেমে কাদা থেকে শামুক তুলছেন, আবার কেউ সেই শামুক ঝুড়িতে করে বিলের পাড়ে জড়ো করছেন। সারাদিন ধরে সংগৃহীত এই শামুক স্থানীয় অর্থনীতিতে আনছে নতুন গতি। আগে অবহেলিত থাকলেও, বাণিজ্যিক চাহিদা বাড়ায় এই জলজ প্রাণীটি এখন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরাসরি বিল থেকে শামুক সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতি বস্তা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পাইকারি দরে কিনছেন। এই শামুকের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মাছের ঘেরে, বিশেষ করে চিংড়ি চাষে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

পানিঘাটা গ্রামের একজন শামুক ব্যবসায়ী, ছলেমান শেখ, জানান তিনি এই ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি মাগুরার বিভিন্ন বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ম্যাক্সিমাইল, লাখোহাটি ও মির্জাপুরের মতো এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে প্রতি বস্তা শামুক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। এই বাড়তি দামই তাকে ব্যবসায় উৎসাহিত করেছে।

শুধু মাগুরাতেই নয়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলাতেই শামুকের বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে। এটি একদিকে যেমন মাছের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে, তেমনই গ্রামীণ পর্যায়ে বহু মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে। তবে পরিবেশবিদরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় শামুকের ভূমিকা উল্লেখ করে নির্বিচার নিধন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শামুক সংগ্রহ করা হলে তা যেমন পরিবেশের ক্ষতি করবে না, তেমনই দীর্ঘমেয়াদে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow