সংকটের মুখে শতবর্ষী ঐতিহ্য, টিকে থাকার লড়াইয়ে মালি সম্প্রদায়

আধুনিকতার প্রবল স্রোতের মুখে যখন বাংলার বহু গ্রামীাণ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে, তখনও মাগুরা সদর উপজেলার ডাঙ্গাসিংড়া গ্রামে সগৌরবে টিকে আছে শতবর্ষী শোলা শিল্প। এখানকার মালি সম্প্রদায়ের শিল্পীরা বংশপরম্পরায় তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই অনন্য লোকশিল্পকে। এটি কেবল তাঁদের জীবিকার উৎস নয়, বরং মাগুরার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার এক জীবন্ত নিদর্শন।
ডাঙ্গাসিংড়া গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে মালি সম্প্রদায়ের ব্যস্ত জীবনচিত্র। গ্রামের প্রবীণ শিল্পী শংকরী রানী মালাকার, পুতুল মালাকার, কোমল মালাকার, গৌতম মালাকার ও বাসু মালাকারসহ বহু নারী-পুরুষ প্রতিদিন শোলা দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন পূজার সাজ, বিয়ের টোপর, বাহারি মালা এবং বিভিন্ন ধরনের ঘর সাজানোর উপকরণ। একসময় গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ধবধবে সাদা আর নরম শোলার এই শিল্পকর্ম। এই গ্রামের মানুষেরা আজও সেই ঐতিহ্যকে পরম মমতায় লালন করে চলেছেন।
বৃদ্ধ শিল্পী শংকরী রানী মালাকারকে প্রতিদিন ভোরেই দেখা যায় শোলা কেটে মালা গাঁথার কাজে। তাঁর মতো শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় শোলা গাছ পরিণত হয় অনবদ্য শিল্পকর্মে। তবে এই শিল্পের পথচলা এখন আর মসৃণ নয়। কাঁচামালের সংকট এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে ধুঁকছে এই শিল্প।
শিল্পী পুতুল মালাকার বলেন, “দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেও এখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে আমরা এই পেশাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। বিশেষ করে, যদি আধুনিক মেশিন সরবরাহ করা হয়, তাহলে উৎপাদন বাড়বে এবং নতুন প্রজন্মও এই কাজে আগ্রহী হয়ে উঠবে।”
শোলা শিল্পীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো কাঁচামাল সংকট। জলাভূমি ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো শোলা পাওয়া যায় না। একসময় যা বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যেত, তা এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক শিল্পীই বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ঝুঁকছেন।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও, ডাঙ্গাসিংড়া গ্রামের শোলা শিল্প আজও গ্রামীণ সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই শিল্পের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং শিল্পীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হলে, মাগুরার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর কদর আরও বাড়বে।
What's Your Reaction?






