লামায় জমি দখল নিয়ে সংঘাত চরমে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত ফাঁসিয়াখালী

মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধ, বান্দরবানঃ
Jul 13, 2025 - 22:13
 0  3
লামায় জমি দখল নিয়ে সংঘাত চরমে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত ফাঁসিয়াখালী

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্যম হায়দারনাশী এলাকায় জমি দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষই সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া থানায় পৃথক দুটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (১২ জুলাই) রাত পৌনে ১০টায় লামা প্রেসক্লাব হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাফর ইকবাল চৌধুরী নামের এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ফরিদুল আলম ও তার সহযোগীরা তাঁর বসতবাড়ি ও বাগান জবরদখলের চেষ্টা করছেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ফরিদুল আলম গং অতীতে বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা ও প্রপাগান্ডার মাধ্যমে হয়রানি চালিয়ে আসছে এবং ভয়ভীতি ছড়িয়ে এলাকা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, “চল্লিশ শতক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জমি, বসতঘর ও গাছপালা জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে ফরিদ গং। ২০০৪ সাল থেকে এ জায়গা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা এবং আদালতে একাধিক মামলা হয়, যার প্রতিটি মামলার রায় আমাদের পক্ষে হয়েছে।”

তার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১২ জুলাই রাত ২টার দিকে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ সশস্ত্র অবস্থায় ফরিদুল আলম গং মমতাজ আহমদের পরিবারের উপর হামলা চালায়। তবে দখল করতে না পেরে লুটপাট চালায় বলে তিনি জানান। পরে ‘৯৯৯’-এ ফোন করে পুলিশি সহায়তায় প্রাণে বাঁচেন বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় ১৬ জুলাই লামা থানায় একটি মামলা করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদুল আলম (৩৩), আবুল কালাম (৩৬), শামসুল আলম (৫৯), সাফিয়া বেগম (৫৫), সানজিদা বেগম (২৩), মফিজ আলম (৩০), মনির (২৮), আসমাউল হোসনা (২৫), মোঃ শরিফ (৫৫), মোঃ ফোরকান (২২), জয়নাল (২৬), নুর আয়েশা (২৫) ও আয়েশা বেগম (৩৮) সহ মোট ১৩ জন।

অন্যদিকে, একই দিন দুপুরে ফরিদুল আলমও এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, জাফর ইকবাল চৌধুরী, তার ভাই নজরুল ইসলাম, কুতুব উদ্দিন (প্রকাশ গুরা সোনাইয়া), মামুন, হারুন ও রেজাউল সহ ৩০-৩৫ জনের একটি দল হামলা চালিয়ে তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের তিনটি বসতঘর, ‘হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল’ এবং স্কুল ক্যান্টিন ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

তিনি আরও দাবি করেন, তাঁর বাবা দীর্ঘদিন আগে ২ একর জমি ক্রয় করে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই জমি তাদের বৈধ মালিকানাধীন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে জাফর গং ওই জমি অন্য জায়গার দলিল দেখিয়ে দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে (সি.আর মামলা নং-১৪২/২০২৫)।

এই প্রসঙ্গে রবিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “দুই পক্ষই পৃথক দুটি এজাহার দাখিল করেছেন। আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত করছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow