একাধিক সমবায় সমিতির নামে কয়েকশ কোটি টাকার প্রতারণা

মোঃ নাজমুল হোসেন,জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুরঃ
Sep 9, 2025 - 14:08
 0  8
একাধিক সমবায় সমিতির নামে কয়েকশ কোটি টাকার প্রতারণা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় একাধিক সমবায় সমিতির মালিক সেজে কোটি কোটি টাকার আমানত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জলাবাড়ী ইউনিয়নের আতা গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা বিআরডিবি অফিসের মাঠ সহকারী উত্তম মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে। তিনি সমিতির টাকায় নিজের ও পরিবারের নামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলে এখন আত্মগোপনের চেষ্টায় রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, উত্তম মিস্ত্রী প্রথমে 'আতা বহুমুখী সমবায় সমিতি'র নামে একটি লাইসেন্স নেন। এরপর স্থানীয় বেকার যুবকদের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও এককালীন ভিত্তিতে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে থাকেন। "ছয় বছরে দ্বিগুণ"—এমন মুনাফার প্রলোভনে পড়ে নেছারাবাদ ও পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি উপজেলার শত শত মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ এই সমিতিতে জমা দেন। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, কৃষক, দিনমজুর ও গরিব শ্রেণির মানুষ বড় অঙ্কের এককালীন ডিপোজিটও রেখেছেন মাঠকর্মীদের চাপে পড়ে। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষে আমানত ফেরত না পেয়ে তারা প্রতিদিন সমিতি অফিসে ভিড় করছেন এবং চোখে জল নিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। সম্প্রতি পাওনাদারদের ক্রমাগত চাপের মুখে উত্তম মিস্ত্রী তার সমিতির সাতটি শাখার মালিকানা পিরোজপুরের এক কথিত সাংবাদিকের কাছে হস্তান্তর করে দেন। এ ঘটনায় গ্রাহকরা আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন—তাদের মতে, এটি আরেকটি প্রতারণার কৌশল।

নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, "উত্তম মিস্ত্রী পিরোজপুর সমবায় অফিস থেকে আতা বহুমুখী সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো নিয়ম-কানুন মানেননি। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সমিতির নিবন্ধন ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। বাকি সমিতিগুলোর কোনোটিই আমাদের অফিস থেকে বৈধভাবে নিবন্ধন নেয়নি।"

তিনি আরও বলেন, "তিনি প্রায় ২২৮ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছেন। এটি একটি ভয়াবহ প্রতারণা। এই ধরনের কাজ আগেও একাধিক সমিতি করেছে এবং পরিচালকরা আত্মগোপনে গেছে।"

নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, উত্তম মিস্ত্রী 'আতা বহুমুখী সমবায় সমিতি', 'প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লি:', 'সোনারবাংলা জনকল্যাণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি' এবং এমআরএ-এর সনদ নিয়ে 'শ্যামলছায়া ফাউন্ডেশন' নামে মোট চারটি সমিতি পরিচালনা করছিলেন। সমবায় আইন অমান্য করে বেআইনি ডিপিএস ও আমানত সংগ্রহসহ নানা অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে 'আতা বহুমুখী সমবায় সমিতি'র নিবন্ধন বাতিল করেছে উপজেলা সমবায় অফিস। এছাড়া, 'প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লি:' এবং 'সোনারবাংলা জনকল্যাণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি' আদালত বন্ধ করে দিলে তিনি একটি রিট দায়ের করে পুনরায় ওই সমিতি দুইটি পরিচালনা করে আসছিলেন।

সন্তোষ মন্ডল নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, "উত্তম মিস্ত্রীর সমিতিতে আমি সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। গত ডিসেম্বর মাসে ডিপিএসটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রায় এক বছর পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে আমাকে ঘোরাচ্ছে। এখন টাকা চাইতে গেলে বলে সমিতি বিক্রি করে দিয়েছি, তার কাছে টাকা চান, আমি বর্তমানে মালিকানায় নেই।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সমিতির পরিচালক উত্তম মিস্ত্রী বলেন, "আমার মাঠে অনেক টাকা ছাড়া আছে, তারা টাকা দিচ্ছে না। তাই আমিও গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছি না। সমিতির টাকায় বাড়ি, জমি, কার্গো জাহাজ করেছি এটা সত্য। এখন সমস্যা হওয়ায় সেগুলো বিক্রি করে দেবো। মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, এটা আমার অধিকার, তাই আমি হস্তান্তর করেছি।"

পিরোজপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা পংকজ কুমার চন্দ্র বলেন, "উত্তম মিস্ত্রীর নামে যে কয়টি সমবায় সমিতির লাইসেন্স ছিল, তার সবকটিরই লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সমবায় আইনের আওতায় তার একটিও সমিতি বৈধভাবে পরিচালিত ছিল না। এখন থেকে তার প্রতিষ্ঠানের কোনো অনিয়মের দায় সমবায় অফিস নেবে না।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow