আগৈলঝাড়ায় শ্বশুরকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুম

মেয়ের অমতে বিয়ে দেওয়ার ক্ষোভ আর পারিবারিক কলহের আগুনে ছাই হলো একটি পরিবার। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শ্বশুরকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে তারই ক্ষুব্ধ জামাই। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রমাণ লোপাট করতে শ্বশুরের লাশ খালে কচুরিপানার নিচে গুম করে রাখে সে। ঘাতক জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈকে (২৫) গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শ্বশুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যা পুরো এলাকায় শোক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের নিরীহ দুধ বিক্রেতা অখিল হালদার মন্টু (৫৫) গত ২০ আগস্ট প্রতিদিনের মতো দুধ বিক্রি শেষে বিকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রাজিহার বাজারের কাছ থেকে তাকে অপহরণ করে জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ। এরপর তাকে বাশাইল-বাটরা সড়কের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং লাশ পার্শ্ববর্তী খালের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়।
স্বামী বাড়ি না ফেরায় পরের দিন ২১ আগস্ট নিহত অখিল হালদারের স্ত্রী বিউটি হালদার আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঘটনার পর জামাই কৃষ্ণ শ্বশুরবাড়ি এলে তার অসংলগ্ন ও সন্দেহজনক কথাবার্তায় পরিবারের সদস্যদের মনে খটকা লাগে।
জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নেমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিখোঁজ অখিল হালদার ও তার জামাই কৃষ্ণের মোবাইল ফোনের লোকেশন একই সময়ে একই স্থানে দেখতে পায়। এরপর মাদারীপুরের ডাসার থানার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে নিহত অখিলের ভ্যান ও দুধের কলসসহ জামাই কৃষ্ণকে দেখা গেলে পুলিশের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। এরই ভিত্তিতে পুলিশ গৌরনদীর বাকাই গ্রাম থেকে কৃষ্ণ বাড়ৈকে আটক করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে প্রথমে সব অস্বীকার করলেও তথ্যপ্রমাণের সামনে ভেঙে পড়ে এবং একাই শ্বশুরকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ২২ আগস্ট রাতে পুলিশ তাকে সঙ্গে নিয়ে আহুতি বাটরা গ্রামের খালের গভীর কচুরিপানার নিচ থেকে অখিল হালদারের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। একইসাথে মাদারীপুর থেকে বিক্রি করে দেওয়া ভ্যানটিও উদ্ধার করা হয়।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের পারিবারিক ক্ষোভ। নিহতের স্ত্রী বিউটি হালদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, "আমার স্বামীর অমতে প্রায় দুই বছর আগে আমাদের মেয়ে আঁখিকে কৃষ্ণ বিয়ে করে। এ নিয়ে পরিবারে প্রথম থেকেই অশান্তি চলছিল। জামাই আমাদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই সে আমার স্বামীকে এভাবে মেরে ফেললো।"
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. অলিউল ইসলাম জানান, ২৩ আগস্ট নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
What's Your Reaction?






