ফরিদপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর (৪৬) ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার (৪০)-এর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন, মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং জ্ঞাত আয়ের বাইরে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রতন কুমার দাশ। বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের উপপরিদর্শক মো. শামীম।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ওয়াদুদ মাতুব্বর সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঠিয়ারগট্টি গ্রামের বাসিন্দা ও আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি পরপর দুই মেয়াদে সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি ঘোষণায় তাঁকে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে তিনি একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। দলীয়ভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কোনো পদে ছিলেন না। ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার পাশ্ববর্তী সিংহপ্রতাপ গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ইমামুল হোসেনের মেয়ে। স্বামীর চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি নিজের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নেন।
দুদক জানায়, ওয়াদুদ মাতুব্বর ও রুমা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। এ অভিযোগের সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর তাঁরা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। পরে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
ওয়াদুদ মাতুব্বরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে তাঁর ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পদের সন্ধান মেলে। অর্থাৎ ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৭ টাকার সম্পদ তিনি গোপন করেছেন এবং ২০ লাখ টাকার ঋণের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। ২০১২-১৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তাঁর বৈধ সম্পদ ৩১ লাখ ২০ হাজার ১৬৭ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে, রুমা আক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, তিনি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাঁর নামে প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে এক কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ১৩৭ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকায় একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে তাঁর নামে। তবে তিনি মাত্র ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৬১৭ টাকার বৈধ সম্পদের তথ্য দিয়েছেন।
দুদকের ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, “ওয়াদুদ মাতুব্বর ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎসের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।”
What's Your Reaction?






