মাত্র নয় মাসে একজন ইউএনও যেভাবে হয়ে উঠলেন গোটা উপজেলার 'অভিভাবক'

কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ
Oct 7, 2025 - 20:15
 0  18
মাত্র নয় মাসে একজন ইউএনও যেভাবে হয়ে উঠলেন গোটা উপজেলার 'অভিভাবক'

প্রশাসনের ধূসর দেয়াল আর লাল ফিতার বাঁধন ছিঁড়ে তিনি নেমে এসেছেন জনতার কাতারে। তিনি শুধু একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নন; তিনি একজন অভিভাবক, দুঃসময়ের বন্ধু এবং হাজারো মানুষের আস্থার প্রতীক। বলছি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবালের কথা, যিনি মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সরকারি কর্মকর্তার পরিচয়ের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছেন 'মানুষের ইউএনও' হিসেবে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আলফাডাঙ্গায় যোগদানের পর থেকেই তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে মিশে ছিল মানবিকতার ছোঁয়া। যেখানেই সংকট, সেখানেই তিনি হাজির হয়েছেন সমাধানের আলো নিয়ে। তাঁর হাত ধরেই পুড়ে যাওয়া ঘরের স্থানে উঠেছে নতুন টিনের চাল, চুরি যাওয়া ভ্যানচালকের চোখে ফিরে এসেছে জীবিকার স্বপ্ন, আর শত শত শীতার্ত মানুষ পেয়েছে উষ্ণতার পরশ।

ইউএনও রাসেল ইকবালের কর্মযজ্ঞ শুধু প্রথাগত দাপ্তরিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। গভীর রাতে যখন চারপাশ নিস্তব্ধ, তখন তাঁর গাড়ি ছুটে চলেছে অভুক্ত মানুষের দ্বারে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। প্রতিবন্ধী শিশুর চিকিৎসার জন্য তিনি যেমন বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত, তেমনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন খাতা-কলম আর বর্ষার ছাতা। এমনকি মানুষের ব্যক্তিগত দুঃখ, জন্মদিন বা যেকোনো প্রয়োজনেও তিনি হয়ে উঠেছেন পরিবারের একজন সদস্য।

একদিকে যেমন তিনি মানবিক কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন, অন্যদিকে প্রশাসনিক নেতৃত্বেও রেখেছেন দক্ষতার ছাপ। বাল্যবিবাহ ও মাদক প্রতিরোধ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। বিশেষ করে, আলফাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহকে আধুনিক স্থাপত্যে রূপান্তর করে তিনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের দিয়েছেন এক নান্দনিক পরিবেশ।

সম্প্রতি 'মানবিক আলফাডাঙ্গা' নামে একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে তিনি স্থানীয় তরুণদের মধ্যে সঞ্চার করেছেন সেবার নতুন স্পৃহা।

নতুন ভ্যান পেয়ে আবেগাপ্লুত চালক জিহাদুল ইসলাম বলেন, "স্যার শুধু ইউএনও নন, তিনি আমাদের মতো গরিবের অভিভাবক।" অগ্নিকাণ্ডে ঘরহারা রুবিনা বেগমের ভাষায়, "তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি হাসি দিয়ে মানুষের কান্না মুছে দেন।"

ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, "এই সরকারি চেয়ার বা পদবি আমার আসল পরিচয় নয়। আমার আসল পরিচয় আমি এই দেশের একজন সন্তান এবং আলফাডাঙ্গার মানুষের সেবক। আমি এখানে দাপ্তরিক ফাইল সই করতে আসিনি, আমি এসেছি মানুষের হৃদয়ের কথা শুনতে এবং তাদের হাসিমুখের কারণ হতে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রার্থনা হলো, আমি যেন কোনো অভুক্তের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারি, কোনো অসহায় মানুষের চোখের জল মুছে দিতে পারি। যতদিন এখানে আছি, আমার দরজা নয়, আমার হৃদয় আলফাডাঙ্গার প্রতিটি মানুষের জন্য খোলা থাকবে।"

তাঁর কর্মনিষ্ঠা, সততা আর মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ আলফাডাঙ্গার গণমানুষের কাছে তাঁকে এক জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। রাসেল ইকবাল একটি নাম নয়, তিনি এক মানবিক বিপ্লবের প্রতিচ্ছবি, যিনি প্রমাণ করেছেন- শাসক নয়, সেবক হওয়াই প্রশাসনের মূল ধর্ম।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow