রুমায় ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে উৎসব শুরু, পাহাড়ে সম্প্রীতির মেলবন্ধন

শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Oct 6, 2025 - 11:45
Oct 6, 2025 - 11:49
 0  3
রুমায় ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে উৎসব শুরু, পাহাড়ে সম্প্রীতির মেলবন্ধন

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে শুরু হয়েছে। মারমা ভাষায় "ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে" নামে পরিচিত এই উৎসবটি চলবে ৬ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। চার দিনব্যাপী এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতে, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। এই সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিশেষ কারণ ছাড়া বিহারের বাইরে রাত্রি যাপন করেন না। প্রবারণার পর বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ধর্মের সবচেয়ে বড় দান, কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তিন মাস বর্ষাব্রত পালনকারী ভিক্ষুরাই কেবল এই চীবর (ভিক্ষুদের পরিধানযোগ্য বস্ত্র) গ্রহণ করতে পারেন।

উৎসব উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যা থেকে উপজেলার ৫৮টি পাড়ার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে অষ্টশীল গ্রহণের জন্য দায়ক-দায়িকারা সমবেত হয়েছেন। রুমা উপজেলা কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপন পরিষদ এই উপলক্ষে চার দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পিঠা উৎসব, বিহারে বিহারে কল্পতরু দান, আকাশে ফানুস উড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং সমাপনী দিনে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পাংখুং নৃত্য।

কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি উক্যসিং মাস্টার জানান, "ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে মারমাদের কেন্দ্রীয় উৎসব হলেও এটি সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি আনন্দঘন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার সময় পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এটি এক মিলনমেলায় রূপ নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আমরা আশাবাদী।"

তিনি আরও জানান, ৮ অক্টোবর সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং এবং উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী। উৎসবটি যাতে আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য তিনি পুলিশ, বিজিবি ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ কাওসার আলী জানিয়েছেন, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে উপজেলার ৫৮টি বৌদ্ধ বিহারের প্রতিটির অনুকূলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৫০০ কেজি করে খাদ্যশস্য (চাল) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট বিহার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow