ছেলেকে সামলান, নয়তো কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন বাধ্য হবে - ইউএনও

স্কুলের সামনেই বখাটেদের জটলা, ছাত্রীদের দেখলেই অশালীন মন্তব্য, আর অভিভাবকদের চোখেমুখে একরাশ আতঙ্ক। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এই পরিচিত দৃশ্যপটকে এবার গুঁড়িয়ে দিলো উপজেলা প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ আর অভিযোগের অবসান ঘটিয়ে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) খোদ ইউএনও রাসেল ইকবাল মাঠে নামেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত এই ঝটিকা অভিযানে আটক বখাটেদের অভিভাবকদের ডেকে এনে দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি, যা এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
অভিযানটি আলফাডাঙ্গা আরিফুজ্জামান সরকারি (মডেল) উচ্চ বিদ্যালয় ও আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল, এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে কিছু বখাটে যুবক নিয়মিত আড্ডা দিত এবং ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল।
আটককৃত কিশোরদের তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির করা হয়। ইউএনও রাসেল ইকবাল অভিভাবকদের সামনে তাদের সন্তানদের অপকর্মের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। আজ প্রথমবার বলে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হলো, কিন্তু এরপরও যদি তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন বাধ্য হবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠুক। তাদের শিক্ষাজীবন বা নিরাপত্তায় কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটুক, তা আমরা চাই না।"
উপজেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, "আমার ছেলে যে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত, তা আমার জানা ছিল না। ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতে ছেলের প্রতি আরও সজাগ থাকব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।"
স্থানীয় সমাজসেবক ও শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, "শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। অনেক সময় এসব বখাটেদের উৎপাতে মেধাবী ছাত্রীদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ইউএনওর এই সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ একটি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।"
উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্থানীয় জনগণ, শিক্ষক এবং অভিভাবক মহল স্বাগত জানিয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একটি নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসবে।
What's Your Reaction?






