স্বপ্ন জয়ের পথে আর বাধা নয় পরিচয়পত্র, জসিমের পাশে উপজেলা প্রশাসন

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলি গ্রামের ২৪ বছর বয়সী তরুণ জসিম মাতুব্বর। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। এই শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে তিনি ২০২০ সালে তালমা নাজিম উদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২২ সালে ফরিদপুর সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি রাজেন্দ্র কলেজে ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে জসিম বিভিন্ন সময় মোবাইল সার্ভিসিং, ফলের দোকান এবং বর্তমানে কাঁচামালের ব্যবসা করছেন। পা দিয়েই তিনি ছাগল চরানো বা ঘাস কাটার মতো দৈনন্দিন সব কাজ সারেন।
তবে এই সংগ্রামী তরুণের পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না। তার জীবনে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র। দুটি হাত না থাকায় আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় বারবার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারেননি। এর ফলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তিনি।
জসিমের এই ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। অবশেষে, বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দবির উদ্দিনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে জসিমের পায়ের আঙুলের ছাপ গ্রহণ করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এর মাধ্যমে তার দীর্ঘদিনের এক ভোগান্তির অবসান ঘটল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দবির উদ্দিন বলেন, "জসিম মাতুব্বর কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি আমাদের সমাজের জন্য এক অদম্য অনুপ্রেরণার নাম। তার জীবনযুদ্ধ আমাদের সবাইকে শেখায় যে কোনো প্রতিবন্ধকতাই ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় হতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, "প্রশাসনিক নিয়ম বা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা যেন জসিমের মতো এমন একজন যোদ্ধার পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব। গণমাধ্যমে বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সাথে সাথেই আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি। এটি শুধু একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান নয়, এটি জসিমের অধিকার এবং আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি। আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের সকল সেবা প্রতিটি নাগরিকের জন্য এবং জসিমের মতো যারা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে, তাদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সবসময় থাকবে।"
আবেগজড়িত কণ্ঠে জসিম মাতুব্বর বলেন, "এই পরিচয়পত্রটা আমার কাছে বন্ধ দরজা খুলে দেওয়ার চাবির মতো। ইউএনও স্যার ও সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার হাতে সেই চাবি তুলে দিয়েছেন। এখন আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছি। আমি কখনও কারো বোঝা হতে চাইনি, শুধু চেয়েছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পড়াশোনাটা শেষ করতে। এই পরিচয়পত্রটা আমার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধাটা দূর করে দিল। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমি মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারি।
জসিম মাতুব্বরের এই জীবন সংগ্রাম সমাজের কাছে এক অনন্য অনুপ্রেরণা। প্রশাসনের এই ইতিবাচক পদক্ষেপে তার এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও এক ধাপ মসৃণ হলো। এখন আশা করা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়ে জসিম নাগরিক সব সুবিধা নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাবেন।
What's Your Reaction?






