পর্যটকদের নিরাপদ ঠিকানা ও বম জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সুংসুয়াং পাড়া ইকো রিসোর্ট উদ্বোধন
বান্দরবানের থানচি ও রুমা উপজেলার সীমান্তে কেওক্রাডং পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন দুর্গম সুংসুয়াং পাড়ায় পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপদ ও মনোরম ‘সুংসুয়াং পাড়া ইকো রিসোর্ট’। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই রিসোর্টটি নির্মাণ করেছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) মনোরম পরিবেশে নির্মিত এই ইকো রিসোর্টটি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শুভ উদ্বোধন করেন বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। উদ্বোধনের মাধ্যমে তিনি রিসোর্টটি স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী নিয়মিত জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এই ইকো রিসোর্ট স্থাপন ও এর ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ অসহায় বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
তিনি আরও জানান, রিসোর্ট থেকে অর্জিত আয় গ্রামবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এসময় তিনি দেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীকে সর্বদা সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল ‘দি ম্যাজেস্টিক টাইগার্স’। সুংসুয়াং পাড়া সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন এই রিসোর্টটিতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি পাহাড়ের কোলে এক মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি পর্যটকদের কাছে একটি নিরাপদ ও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, ২০২৩ সালের শুরুতে পাহাড়ে কেএনএ-এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তাণ্ডবের কারণে এলাকায় চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতের মিজোরামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যান। দীর্ঘ দুই বছর বাস্তুচ্যুত থাকার পর সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানের ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগে তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল ‘দি ম্যাজেস্টিক টাইগার্স’-এর সুংসুয়াং পাড়া সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক, অন্যান্য সেনা সদস্য এবং দুই শতাধিক স্থানীয় বম নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
What's Your Reaction?
অনুপম মারমা, থানচি প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ