জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৮দলে যুক্ত হচ্ছে বীরবিক্রম কর্নেল অলি আহমেদ, এনসিপি,লেবার পার্টি ও এবি পার্টি

মোঃ রহমাতুল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকাঃ
Dec 27, 2025 - 13:06
 0  38
জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৮দলে যুক্ত হচ্ছে বীরবিক্রম কর্নেল অলি আহমেদ,  এনসিপি,লেবার পার্টি ও এবি পার্টি

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা আট দলের কলেবর আরো বাড়ছে। নির্বাচনকালীন এ জোটে যুক্ত হতে যাচ্ছে এনসিপি, এবি পার্টি, এলডিপি ও লেবার পার্টি। আট দলের আসন সমঝোতার শেষ সময়ে এসে নতুন করে আরো চারটি দল যুক্ত হওয়ায় আসন সমঝোতায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে দিনরাত কাজ করে দ্রুতই সমাধানের দিকে যেতে চাচ্ছে দলগুলো।

‎পাঁচ দফা দাবি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। এ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে পীরসাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বিডিপি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী বাছাই শুরু করে এ আট দল। জানা গেছে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ সমঝোতার কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ কিছু আসনে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, মূলত কোন আসনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং শীর্ষ নেতৃত্ব কোন আসনে আছেন এর ওপর ভিত্তি করে প্রার্থী ঠিক করা হবে। এ জন্য প্রত্যেক দল নিজেরা ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়েও জরিপ চালিয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি দফায় দফায় বৈঠক করেছে দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটি। নেতারা বলছেন, ইসলামী শক্তির একবাক্স নীতিতে তারা নির্বাচনী সমঝোতা করছেন। এজন্য এখানে কারো নেতৃত্বে নয়, সবার সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থী ঠিক করা হবে। তবে দলগুলোর মাঠপর্যায়ে অবস্থানকেও এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আট দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, এরপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, তারপর খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রায় সমপর্যায়ের আসন পাবে। এরপর খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বিডিপির মধ্যে আসন বণ্টন হবে। তবে সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনের নেতাদের সমন্বয়ে গড়া দল এনসিপি জামায়াত জোটে আসার আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা যায়, তাদের আসন কতটি দেয়া হতে পারে তা নিয়ে গত কয়েক দিনে জামায়াত জোটের নেতাদের সাথে আলোচনা চলে। এনসিপি ৩০টির মতো আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কতটি আসন দেয়া হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলগুলোর নেতাদের সূত্রে জানা যায়, এনসিপির বর্তমানে মাঠপর্যায়ে তেমন নেতাকর্মী না থাকলেও জুলাই আন্দোলনে তাদের ভূমিকাকে মূল্যায়ন করতে চায় জামায়াত জোট। এ ছাড়া সংস্কারের পক্ষে এনসিপির অবস্থান এ জোটে আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা শুরু থেকেই একক, যৌথ বা আসন সমঝোতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে ওপেন ছিলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত এবং আরো রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের জোট গঠন বা আসন সমঝোতার বিষয়ে এবং রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি মূল্যায়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কার প্রশ্নে কারা বেশি আগ্রহী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সে বিষয়টিকেই এনসিপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি। আখতার হোসেন আরো বলেন, ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সাথেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়, দেশটাকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট সেটাকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন করছি।

‎এনসিপির সাথে থাকা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের শরিক আমার বাংলাদেশ পার্টির (এ বি পার্টি) জোটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিন দলের সমন্বয়ে গড়া জোটের অপর শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জামায়াত বা বিএনপি কোনো জোটেই যেতে রাজি নয়। এ ছাড়া কর্নেল অলি সম্প্রতি বিএনপি জোট ত্যাগ করে জামায়াত জোটে আসার চেষ্টা করছেন। এ জন্য আট দলের সাথে তাদের আলোচনা চলছে। এলডিপি জামায়াতের কাছে ১০টি আসন চেয়েছে বলে জানা যায়। তবে চার-পাঁচটি আসন দিলে তারা এ জোটে যোগ দিতে পারে বলে দলটির নেতাদের সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া লেবার পার্টিও বিএনপি জোট থেকে বঞ্চিত হয়ে জামায়াতের দিকে ঝুঁকেছে। সে ক্ষেত্রে ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে একটি আসন দেয়া হতে পারে। নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জোটের পরিধি বাড়াতে ও আসন সমঝোতা করতে জামায়াত জোট দফায় দফায় বৈঠক অব্যাহত রেখেছে। জোট ভেঙে যাচ্ছে বা আসন সমঝোতা নিয়ে সমস্যা চলছে- এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে আট দলের সমঝোতাসংক্রান্ত বিভিন্ন নিউজে কেউ কেউ কিছু অপতথ্য, অসত্য তথ্য এবং টুইস্টিংয়ের ব্যবহার করছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য অতি বেদনার। আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করব আপনাদের কাছ থেকে জনগণ শতভাগ সত্য এবং পেশাদার সংবাদ পাবে। দেশ-জাতি ও মানবতার স্বার্থে আপনাদের পেশাদারিত্ব অনেক বেশি জরুরি।

‎ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য শেখ ফজলুল করীম মারুফ দৈনিক খোলাচোখকে বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে সবাই অত্যন্ত আন্তরিক। ২৬০টির মতো আসনে আমরা সমঝোতায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। সর্বশেষ নতুন কিছু দলের আট দলের সাথে যুক্ত হওয়ার আলোচনা চলায় বিষয়টি চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় যাচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুতই আলোচনা শেষে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।বাংলাদেশ ভ্রমণ

‎খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, নতুন কিছু দল যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে সব দলকে কিছু আসন করে ছাড়তে হবে। এটি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও সবাই জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে আন্তরিক। এ জন্য জোট ভাঙার কোনো প্রশ্ন নেই। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে আমরা সমঝোতায় পৌঁছে যাবো এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।

‎আট দলের সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ দৈনিক খোলাচোখকে বলেন, সর্বশেষ আরো চারটি দলের আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার আলোচনা চলছে। এ জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে। আরো চার দল যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে আট দলের সব দলকেই কিছু আসন ছাড়তে হবে। এটি নিয়েই সর্বশেষ আলাপ চলছে দলগুলোর মধ্যে। তবে সবাই আন্তরিক। সংস্কারের পক্ষে ও ইসলামী শক্তির একবাক্সের নীতিতে এখনো সবাই অটল আছে। সবাই ছাড় দেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক।

‎বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক খোলাচোখকে বলেন, সর্বশেষ কিছুটা টানাপড়েন দেখা গেছে। এ জন্য চূড়ান্ত করতে সময় লাগছে। সবাই সম্মানজনক আসন চান। তার কম হলে সমস্যা হতে পারে। তবে এখনো সবাই চান ঐক্য ধরে রাখতে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দল জামায়াতকে বেশি ছাড় দিতে হবে।

‎খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সর্বশেষ কিছুটা টানাপড়েন আছে। তবে কেউ জোট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে এ খবর সঠিক নয়। এর মধ্যে নতুন চারটি দল যুক্ত হতে যাওয়ার আলোচনা চলছে। তাদেরও আসন ছাড়তে হবে। সব মিলে সবাই ঐক্য চায়। কেউই এ জোট থেকে বের হতে চায় না। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। এ জন্য আমরা ছাড় দিচ্ছি। প্রথমে ৩৫টি আসন চেয়েছিলাম, সেখান থেকে ৩০টি আসন এরপর আরো চাহিদা কমিয়েছি। একইভাবে সবাইকেই ছাড় দিতে হবে। তাহলে সমাধান হয়ে যাবে আশা করছি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow