কালকিনিতে ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আলমাস বেপারী, কালকিনি প্রতিনিধি, মাদারীপুরঃ
Oct 16, 2025 - 17:49
 0  5
কালকিনিতে ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের কালকিনিতে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ও প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়দের একটি অংশ। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে 'স্থানীয় জনতা'র ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাদের অভিযোগ, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় মাদক সেবন, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রতিবছর শ্যামাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এই কুন্ডুবাড়ির মেলাকে ঘিরে এলাকায় চুরি, ছিনতাই এবং মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। কালকিনি কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম হোসেন বলেন, "কুন্ডু বাড়িতে পূজা অনুষ্ঠানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু মেলার নামে কোনো অনৈতিক কার্যকলাপ চলতে পারে না। আমরা এই মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাই।"

আনুমানিক ১৭৮৩ সালে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন এবং তখন থেকেই এটি 'কুন্ডুবাড়ির মেলা' নামে পরিচিতি লাভ করে। দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলাটি কালক্রমে দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ মেলায় পরিণত হয়। কাঠের আসবাবপত্রের জন্য বিখ্যাত এই মেলায় মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নানা পণ্যের পসরা সাজান। প্রতিবছর মেলাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এবং লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।

সম্প্রতি মেলা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় আলেম সমাজ ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার যুক্তিতে উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে মেলার আয়োজন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মেলার ইজারা বাতিল করে। মেলা বন্ধের ঘোষণায় বিভিন্ন মহলে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

পরিস্থিতি বিবেচনায়, জেলা প্রশাসন উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করে। শেষ পর্যন্ত, সব পক্ষের সম্মতিতে মেলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে সীমিত পরিসরে তিন দিনের জন্য মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, এবারই প্রথম মেলাটি ইজারামুক্ত বা 'টোল ফ্রি' ঘোষণা করা হয়, ফলে ব্যবসায়ীরা কোনো প্রকার চাঁদা ছাড়াই দোকান বরাদ্দ পান।

মেলা চলাকালীন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে। পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেলায় জুয়া, অশ্লীলতা বা যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow