ফরিদপুর বিভাগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গণসমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত

ফরিদপুরকে অবিলম্বে বিভাগ হিসেবে বাস্তবায়নের দাবিতে ফরিদপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এক গণসমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক আবরাব নাদিম ইতু। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফরিদপুরকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা বলেন, ফরিদপুরকে বিভাগ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি, যার ফলে এ জেলার মানুষ বিভিন্নভাবে উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়েছে।
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, "ফরিদপুর বিভাগ হলে এখানে ব্যাপক উন্নতি হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।"
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ.কে.এম. কিবরিয়া স্বপন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল তাদের বক্তব্যে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নে যেকোনো ধরনের বাধা সৃষ্টির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তারা বলেন, যারা ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের পরিণতি ভালো হবে না।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরিজ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আমজাদ হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মফিজ ইমাম মিলন এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আলতাফ হোসেন।
বক্তারা বলেন, বিভাগ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে। তারা অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান। সমাবেশে বক্তারা পার্শ্ববর্তী একটি জেলার অযৌক্তিক আন্দোলনের সমালোচনাও করেন। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরে আন্দোলন চলছে।
ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিটি দীর্ঘদিনের। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ফরিদপুরবাসী এই দাবি জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা নিয়ে 'পদ্মা' বিভাগ এবং কুমিল্লার পাঁচটি জেলা নিয়ে 'মেঘনা' বিভাগ গঠনের প্রস্তাব উঠলেও তা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা নিয়ে 'ফরিদপুর বিভাগ' এবং কুমিল্লা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো নিয়ে 'কুমিল্লা বিভাগ' গঠনের প্রস্তাব করেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রি-নিকার বৈঠকে এ দুটি বিভাগ গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকেই ফরিদপুরবাসী বিভাগ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।
What's Your Reaction?






