ফরিদপুরের সালথায় শিক্ষিকার বেতন বন্ধ করলো প্রশাসন

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি এবং শিক্ষাগত সনদে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে ফরিদপুরের সালথায় এক শিক্ষিকার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হালিমা খাতুনের নিয়োগটি অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উক্ত মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী। তিনি জানান, "শিক্ষক হালিমা খাতুনের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যে ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ ছিল, তার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। একারণে তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।"
জানা যায়, মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম গত বছরের ২১ নভেম্বর ইউএনও-র কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের সময় এই পদের জন্য আবশ্যকীয় বিপিএড (শারীরিক শিক্ষা) প্রশিক্ষণ সনদ তার ছিল না।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, তার নথিতে ২০০৪ সালে পাশ করা একটি বিপিএড সনদ পাওয়া যায়, যেখানে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। অর্থাৎ, সনদটি ভুয়া বলে প্রতীয়মান হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমানের তদন্তে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের মাদ্রাসা জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে যোগদানের সময়ই বিপিএড বা সমমানের প্রশিক্ষণ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু হালিমা খাতুন চাকরিতে যোগদানের প্রায় ১৩ বছর পর, ২০১৩ সালে, কুষ্টিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিপিএড সনদ অর্জন করেন, যা শুরুতেই তার নিয়োগকে অবৈধ প্রমাণ করে।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইউএনও আনিছুর রহমান বালী বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন এবং মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারকে হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো জুন মাসের বেতনের জন্য তার নাম পাঠান। ইউএনও বিষয়টি ধরে ফেলেন এবং বেতন শিট থেকে হালিমা খাতুনের নাম কেটে দিয়ে বাকি শিক্ষকদের বেতনে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা হালিমা খাতুন দাবি করেন, তিনি ২০১৩ সালেই বিপিএড পাশ করেছেন। ২০০৪ সালের ভুয়া সনদের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবু নাসের আহমাদ বলেন, "হালিমা খাতুনের নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে তার বেতন বন্ধ করা হয়েছে।"
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুস্মিতা সাহা ইউএনও-র এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, "অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়াদের বিরুদ্ধে এটি একটি চমৎকার পদক্ষেপ। এ ধরনের কাজে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।"
What's Your Reaction?






