পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ, ৫০ হাজারে দফারফা

বান্দরবানের রুমায় পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানার এক বেআইনি সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই ঘটনায় ধর্ষক ও তথাকথিত সামাজিক ‘মোড়লদের’ গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে রুমা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে দশটায় ‘রুমার মারমা যুব সমাজ’ এর ব্যানারে রুমা বাজারের কেন্দ্রীয় মন্দির মার্কেটের সামনে শত শত মানুষ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদেরকারীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
মারমা যুবনেতা মং হাই নু মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যারা সালিশি বিচার বসায়, তারা ধর্ষকদের চেয়ে কম অপরাধী নয়।" তারা অভিযোগ করেন, পাইন্দু ইউনিয়নের মেম্বার গংবাসে মার্মা, মৌজা হেডম্যান মংচউ মার্মা এবং কারবারি থোয়াই সা মার্মা বেআইনি সালিশ বসিয়ে বাকিতে জরিমানা ধার্য করার নাটক সাজিয়ে ধর্ষকদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে রুমা প্রেসক্লাবের সভাপতি শৈহ্লাচিং মার্মা, নারী নেত্রী রেম এং ময় বম, ও ড. ওয়াইনু মার্মা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, "ধর্ষক ও সালিশি বিচারক—উভয়েই সমান অপরাধী। পলাতক দুই ধর্ষককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তাদের পালাতে সহায়তাকারী সালিশি আয়োজকদেরও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।"
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় পাঁচজন মিলে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পাড়ার কারবারি থোয়াই সা মার্মার বাড়িতে এক সালিশি বৈঠক বসে। পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার গংবাসে মার্মা ও মৌজা হেডম্যান মংচউ মার্মার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই সালিশে অভিযুক্তদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা ‘বাকিতে’ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হয়। চাপের মুখে ১৯ আগস্ট পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিন ধর্ষক—ক্যসাইওয়াং মার্মা, ক্যহ্লাওয়াং মার্মা ও উহাইসিং মার্মাকে আটক করে। পরে পাঁচজনের বিরুদ্ধেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তবে মূল হোতাসহ দুজন এখনও পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালিশি আয়োজক মেম্বার গংবাসে মার্মা দাবি করেন, ভুক্তভোগীর পরিবার ও গ্রামবাসীর অনুরোধেই তারা সালিশি বৈঠকে বসেছিলেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আরবী জানিয়েছেন, "সালিশি বিচার আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
What's Your Reaction?






