১৫ হাজার টাকার ‘উপহার’ নিয়ে তুলকালাম, বেতন আটকে রাখায় রাস্তায় নামলেন শিক্ষকরা

মোঃ নাজমুল হোসেন,জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুরঃ
Aug 14, 2025 - 20:28
 0  1
১৫ হাজার টাকার ‘উপহার’ নিয়ে তুলকালাম, বেতন আটকে রাখায় রাস্তায় নামলেন শিক্ষকরা

শিক্ষকদের বেতনের টাকা আটকে রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকার এক ‘বিতর্কিত উপহার’ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে। এই অভিযোগে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেই রাস্তায় নামতে বাধ্য হলেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এফ. করিম আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের জুলাই মাসের বেতন আটকে রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

বেলা ১টার দিকে মাদ্রাসার সামনের ব্যস্ত ইন্দুরকানী-বালিপাড়া মহাসড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন আটকে রাখার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা রিয়াজুল ইসলাম এবং অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মাওলানা জহিরুল হকের খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা জানান, মূল অধ্যক্ষ রাজনৈতিক কারণে অভিযুক্ত হওয়ায় গত বছর উপজেলা প্রশাসন মাওলানা রিয়াজুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রতিষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা ছরোয়ার হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, "ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষকদের মধ্যে প্রকাশ্যে দলাদলি সৃষ্টি করেছেন, যার কারণে মাদ্রাসার পড়াশোনার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় অনেক ছাত্র অন্য মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে। আমরা এই অযোগ্য অধ্যক্ষের অপসারণ চাই এবং আমাদের বেতন নিয়ে যেন কোনো টালবাহানা না করা হয়, তার স্থায়ী সমাধান চাই।"

প্রভাষক মাওলানা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, "ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিনিয়র শিক্ষকদের কোনো মতামত না নিয়ে ২-৩ জন অনুসারীর কথায় প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। আর সভাপতি সাহেবও কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই তার কথায় সায় দেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।"

এই অচলাবস্থার নেপথ্যে রয়েছে আল ফাতাহ প্রকাশনী থেকে ‘উপহার’ হিসেবে পাওয়া ১৫ হাজার টাকা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা রিয়াজুল ইসলামের ভাষ্যমতে, প্রকাশনী থেকে পাওয়া ওই টাকা তিনি শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। কিন্তু বেতন বিলে স্বাক্ষর করার সময় সভাপতি শর্ত জুড়ে দেন যে, ওই ১৫ হাজার টাকা তার কাছে জমা না দেওয়া পর্যন্ত বেতন বিল ব্যাংকে জমা দেওয়া যাবে না।

অন্যদিকে, সভাপতি মাওলানা জহুরুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, বেতন বিল তিনি স্বাক্ষর করেছেন, কিন্তু শিক্ষকরা বিভিন্ন খাতের অর্থ লুটপাট করেন এবং পাঠদানে অমনোযোগী। তার মতে, প্রকাশনীর দেওয়া ওই টাকা তিনি মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য ফেরত চেয়েছেন, ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়।

একজন ছাত্র অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, "আমার ছেলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। প্রায়ই শুনি ক্লাস হয় না। শিক্ষকরাই যদি দুই ভাগে বিভক্ত থাকেন, তাহলে বাচ্চারা কী শিখবে?"

এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য বেতন দ্রুত পরিশোধ এবং মাদ্রাসায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow