একই বাড়ি বারবার বিক্রি, অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে সপরিবারে লাপাত্তা নারী

একই বাড়ি ও জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রির নামে বায়না করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সপরিবারে উধাও হয়ে গেছে এক প্রতারক পরিবার। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শ্রীধরপুর এলাকায়। গত রবিবার থেকে অভিযুক্ত পলি আক্তার ও তার দুই ছেলে লাপাত্তা হয়ে গেলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়।
এই ঘটনায় প্রতারণার শিকার জামান হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে পলি আক্তার এবং তার দুই ছেলে সাঈদ ও জিহাদ মোহাম্মদ রাতুলের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী মৃত আব্দুল ছালামের স্ত্রী পলি আক্তার তার সাড়ে ৫ শতাংশ জমিসহ দোতলা পাকা বাড়িটি ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য জামান হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, গত দুই মাস আগে জামান হোসেন নগদ ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে একটি বায়নাপত্র দলিল করেন। কথা ছিল, দুই মাসের মধ্যে বাকি ৫৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে তিনি বাড়ির রেজিস্ট্রি বুঝে নেবেন।
কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর পলি আক্তার ও তার ছেলেরা রেজিস্ট্রি দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে জামান হোসেন চাপ দিলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এর মধ্যেই তিনি জানতে পারেন, পলি আক্তার শুধু তাকেই নয়, একই বাড়ি বিক্রির কথা বলে আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কামাল নামে আরেক ভুক্তভোগী অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জানান, "পলি আক্তার তার বাড়ির দেড় শতাংশ জমি আমাকে রেজিস্ট্রি করে দেবে বলে বায়না দলিল করে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়নি।"
প্রতারণার এই ফাঁদে পা দিয়েছেন আরও অনেকেই। টুকলো নামে এক নারী সাড়ে ১১ লাখ, শম্পারানী নামে আরেকজন ১১ লাখ, কল্যাণী ১ লাখ এবং নাসির নামে এক ব্যক্তি ১ লাখ টাকা দিয়ে এখন দিশেহারা। ভুক্তভোগীদের দাবি, পলি আক্তার ও তার দুই ছেলে সবার কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন জানান, "একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতারক পরিবারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
একই সম্পত্তি একাধিকবার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা তাদের কষ্টের জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
What's Your Reaction?






