স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার ১৪ বছর পর পাষণ্ড স্বামীর যাবজ্জীবন

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ
Aug 11, 2025 - 16:50
 0  2
স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার ১৪ বছর পর পাষণ্ড স্বামীর যাবজ্জীবন

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এক বাবার যন্ত্রণাময় অপেক্ষার অবসান হলো অবশেষে। যৌতুকের জন্য নিজের স্ত্রী মালিনার গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারার মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে স্বামী রয়েল মণ্ডলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ফরিদপুরের আদালত। একইসাথে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত হত্যাকারী রয়েল মণ্ডলের মুখে ছিল না কোনো অনুশোচনার ছাপ। রায় ঘোষণার পর তাকে পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন এই রায় নিশ্চিত করে জানান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির এক ভয়ঙ্কর সন্ধ্যায়। সদর উপজেলার পরানপুর গ্রামে স্বামী রয়েলের বাড়িতে যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্মম নির্যাতনের শিকার হতেন মালিনা। মেয়ের ওপর নির্যাতনের খবর পেয়ে তার বাবা আব্দুল রহিম খাঁ সেদিন মেয়েকে নিজের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলেন।

রাত আনুমানিক ৮টার দিকে যখন আব্দুল রহিম খাঁ তার মেয়ে মালিনা ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই রয়েল ও তার সহযোগীরা পথ আটকায়। তারা মালিনাকে জোর করে ধরে পাশের একটি গম ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে পাষণ্ড স্বামী রয়েল তার সারা শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মালিনার বাঁচার আকুতি আর আর্তচিৎকারে আশেপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু ততক্ষণে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ।

এই ঘটনায় নিহত মালিনার বাবা আব্দুল রহিম খাঁ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৪ বছরের বিচার প্রক্রিয়া এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আদালত আজ এই রায় ঘোষণা করলো। মামলার অন্য তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস প্রদান করেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow