ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে অসুস্থ বড় ভাই এখন মামলার আসামি

ছোট ভাইয়ের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন। তাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটে এলেন অসুস্থ বড় ভাই। কিন্তু কে জানতো, এই উদ্ধারচেষ্টাই তার জন্য কাল হবে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ভাইকে রক্ষা করতে গিয়ে এখন নিজেই মামলার আসামি হয়েছেন সেই বড় ভাই ও তার ছেলে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এমনই এক উল্টো বিচারের অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী, বিচারের দাবিতে করেছে প্রতিবাদ সভা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের কালীবাড়ী লঞ্চঘাট এলাকায় এই অবিচারের বিরুদ্ধে একজোট হন স্থানীয়রা। তাদের একটাই দাবি—প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে নিরপরাধদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, ঘটনার মূলে রয়েছে সমসাবাদ এলাকার মৃত মোসলেম শেখের চার ছেলে—অলিল, রুহুল, আতাহার ও মোজাফ্ফরের মধ্যকার দীর্ঘদিনের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। এই পারিবারিক দ্বন্দ্বে তাদের প্রতিবেশী মৃত ইলিম শেখের ছেলে ইসমাইল, এক ভাই মোজাফ্ফরের পক্ষ নিলে অন্য তিন ভাই তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
সেই আক্রোশের জেরেই গত ১২ জুন সন্ধ্যায় অলিল, রুহুল ও আতাহার মিলে ইসমাইলকে কালীবাড়ী লঞ্চঘাট এলাকায় ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। ছোট ভাইয়ের আর্তনাদ শুনে তাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তার অসুস্থ বড় ভাই ইব্রাহীম। কিন্তু হামলাকারীরা তাকেও ছাড়েনি, তাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
ভুক্তভোগী অসুস্থ ইব্রাহীম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার ছোট ভাই শুধু মোজাফ্ফরের সাথে মেশে, এটাই ছিল ওদের চোখে অপরাধ। সেদিন আমার ভাইকে ওরা প্রায় মেরেই ফেলছিল। আমি তাকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও নির্দয়ভাবে মারধর করে। অথচ এখন আতাহার থানায় উল্টো মোজাফফরসহ আমাদের ৬ জনের নামেই মামলা দিয়েছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই।"
অন্যদিকে, এই অভিযোগের বিষয়ে মামলার বাদী আতাহার শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, "ইসমাইল আমার ভাই মোজাফ্ফরের পক্ষ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে এবং আমাদের না জানিয়ে গাছ কেটেছে। এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করতেই মারামারি বেধে যায়।" তিনি আরও বলেন, "আমরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মেটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা মীমাংসায় না এসে আগে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও মামলা করেছি।"
এই জটিল পরিস্থিতি নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজ্জাক জানান, "উভয় পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছে। একটি জিডি এবং একটি মামলা হয়েছে। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং সত্যতা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আর পাল্টাপাল্টি মামলার এই জটে আসল সত্য চাপা পড়ার আশঙ্কায় ভুগছে ভুক্তভোগী পরিবার। এখন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হবে—এটাই এলাকাবাসীর একমাত্র প্রত্যাশা।
What's Your Reaction?






