বিজয়নগরে কাদায় ডুবছে দেড় হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন

এক হাতে বইয়ের ব্যাগ, অন্য হাতে জুতো, কাদাপানি মাড়িয়ে মাদ্রাসার পথে চলেছে কোমলমতি শিশুরা—এই দৃশ্য এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের শ্রীপুর পশ্চিম মধ্যপাড়ার এক নিয়মিত চিত্র। একটিমাত্র বেহাল রাস্তা যেন এলাকার দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সামনে এক বিশাল প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকায় অবস্থিত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) মহিলা টাইটেল মাদ্রাসা এবং শ্রীপুর কেরাতুল কোরআন কারিমিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই রাস্তাটি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি ডোবায় রূপ নেয়, সৃষ্টি হয় বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ। এই পথে চলতে গিয়ে কাদা ছিটে বইপত্র নষ্ট হওয়া, পরিষ্কার জামাকাপড় কাদায় মাখামাখি হওয়া কিংবা হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হওয়া এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক শিশু ভয়ে বা বিরক্ত হয়ে মাদ্রাসার পথ থেকে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের শিক্ষাজীবনে ফেলছে এক নেতিবাচক প্রভাব।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পীরে কামেল মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আক্ষেপের সুরে বলেন, “গত ৩-৪ বছর ধরে এই রাস্তাটির মরণদশা চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো ফল পাইনি। আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে চাই, কিন্তু এই রাস্তাই তাদের চলার পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তারা সম্প্রতি নিজ নিজ মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধন করে তাদের দুর্ভাগ্যের কথা তুলে ধরেছে। তাদের কোমলমতি কণ্ঠের আকুতি ছিল একটাই— “আমরা আর কাদা মাড়িয়ে মাদ্রাসায় যেতে চাই না, আমাদের রাস্তা ঠিক করে দিন।”
শিক্ষার্থীদের এই আকুতির জবাবে সিংগারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও স্থানীয় সদস্য মোঃ গিয়াসউদ্দিন মেম্বার বরাবরের মতোই আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন। তারা সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং খুব শিগগিরই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
কিন্তু এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আর আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। তাদের প্রশ্ন, আর কত দিন এই দুর্ভোগ পোহাতে হবে? একটি রাস্তার জন্য দেড় হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ এমন অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে—এখন এটাই সবার প্রত্যাশা।
What's Your Reaction?






