ফুলবাড়িয়ায় ‘কমার্স’ শাখা ছাড়াই ১২ বছর ধরে সরকারি বেতন নিচ্ছেন শিক্ষক

বিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা (কমার্স) শাখা চালু না থাকলেও সেই বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সরকারি বেতন ভাতাদি উত্তোলন করছেন সরকার মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ নামের এক শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
জানা গেছে, রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি ১৯৬৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সেই সময় বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার অনুমোদন পায়। প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি হয় ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি। এরপর থেকে বিদ্যালয়টি একই পাঠক্রমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকার মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ ‘সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা)’ পদে নিয়োগ পান। পরবর্তী বছরে, অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১ মে তিনি এমপিওভুক্ত হন। সেই থেকে সরকার নির্ধারিত বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করে আসছেন তিনি। অথচ বিদ্যালয়টিতে এখনো পর্যন্ত ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ নামে কোনো শাখা চালু হয়নি।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তারা জানান, বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা চালু আছে। কমার্স শাখার কোনো শিক্ষক রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার অনুমোদনের চিঠিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গত ৪ মার্চ ফুলবাড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডি নম্বর- ১৭৭। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইয়েদুল ইসলাম এ জিডি করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবু নাসিম চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ শাখার অনুমোদন ছাড়াই একজন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে বেতন উত্তোলন করে আসছেন।
এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুল হোসেন বলেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো কাগজপত্র আমার কাছে নেই। তবে কিছু কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’
জেলা শিক্ষা অফিসার মোহছিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সরকার মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ জানান, ‘আমাকে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। আমি শুধু বাংলা ও ইংরেজি পড়াই। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা খোলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২০২৪) জরিপেও রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ শাখা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও কেন এবং কীভাবে একজন শিক্ষক ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ শাখার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।
What's Your Reaction?






