উন্নত জীবনের স্বপ্নে নিঃস্ব নান্টুর পরিবার

উন্নত জীবনের স্বপ্নে সৌদি আরব থেকে দেশে এসে স্থানীয় দালালের প্রলোভনে ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের ফারুকুল ইসলাম নান্টু। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ইটালি পৌঁছানোর আশায় বিভিন্ন দেশ ঘুরে লিবিয়ায় গিয়ে দুই মাস ২৪ দিন জেল খেটে দেশে ফিরলেও নান্টু এখন নিঃস্ব—হাতছাড়া হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
ফারুকুল ইসলাম নান্টু বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ মিয়ার ছেলে। মাথায় কয়েক লাখ টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী নাজমা বেগম ২১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্টে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্তাধীন।
মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে একই গ্রামের ছোটন আলীর ছেলে হেফজু ওরফে আশিক (৩৫), তার ছোট ভাই হান্নান আলী (২৫) ও পিতা ছোটন আলীকে (৫৫)।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হেফজু দীর্ঘদিন ধরে বৈধ উপায়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপের ইটালিতে লোক পাঠানোর কাজ করে বলে পরিচিত। তার প্রস্তাবে ১৬ লাখ টাকায় চুক্তি হয় নান্টুর সাথে। চুক্তি অনুযায়ী নান্টু প্রথমে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে ২৫ জুন ২০২৪ তারিখে ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিশর হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান। সেখানে পৌঁছানোর পর পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র অভিযুক্তরা নিজেদের কাছে রেখে দেন এবং শুরু হয় দুর্বিষহ নির্যাতন।
অভিযোগে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় নান্টু ও অন্যান্য ভুক্তভোগীদের। তাদের নির্যাতনের কথা বাড়িতে জানানো হলে ছোটন আলীর মাধ্যমে আরও ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে লিবিয়া পুলিশ চক্রটির হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে। তবে নান্টুকে ২ মাস ২৪ দিন জেল খাটতে হয়। পরে আরও ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্ত হয়ে তিনি ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে দেশে ফেরেন।
নান্টু জানান, "সৌদি আরবে থাকাকালীন গ্রামের ছেলে হেফজুর মাধ্যমে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা করি। তার কথামতো সব করেছি। সুদে টাকা, জমি বিক্রি, মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতা বন্ধক, স্ত্রীর গয়না বিক্রি—সব মিলিয়ে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতির কিছুই পূরণ হয়নি। জেলে অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে বেঁচে ফিরলেও আমরা নিঃস্ব। আমি ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার চাই। যেন আর কেউ এভাবে প্রতারিত না হয়।"
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হেফজু ওরফে আশিক বলেন, "আমার সাথে তার চুক্তি ছিল লিবিয়া পর্যন্ত নেওয়ার। পরে সে নোয়াখালীর এক দালালের মাধ্যমে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করে। এর দায় আমার নয়।"
What's Your Reaction?






