বর্ণিল আয়োজনে বেরোবি’র ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উদযাপিত হলো প্রতিষ্ঠানের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রবিবার (১২ অক্টোবর, ২০২৫) পালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
মূল অনুষ্ঠানমঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন, অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১৫ বছরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি নবজাগরণের পথে রয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রশাসন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও সামাজিক সহায়তার প্ল্যাটফর্মগুলোর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটিকে মানসম্মত জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার।”
শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ ও মানসম্পন্ন শিক্ষকদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হবে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গ তথা গোটা দেশের উচ্চশিক্ষার অগ্রযাত্রায় শীর্ষস্থান অর্জন করতে পারবে।”
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ’-এর আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. রেজাউল হক বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উত্তরবঙ্গের নয়, বরং গোটা দেশের উচ্চশিক্ষা বিকাশের প্রতীক। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস, যা উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছে।”
প্রধান আলোচক হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শক্তি নিহিত তার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষণার মানে। তাই এখন গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। উন্নয়ন মানে কেবল ভবন নির্মাণ নয়, বরং মুক্ত চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো। তাহলেই বেরোবি সত্যিকার অর্থে জ্ঞান-আলোকের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বে বেরোবি এখন একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠান দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আমরা এখন নবজাগরণের পথে। একাডেমিক উৎকর্ষ অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সুযোগ বৃদ্ধি, নতুন ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্প-একাডেমিক সংযোগ জোরদার করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পায়। আমাদের লক্ষ্য—বেরোবিকে আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করা।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক। বক্তব্য রাখেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন মো. ফেরদৌস রহমান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. তাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, সুজন রংপুর মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জুসহ শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সময় সম্মানিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ‘কিক মেক দ্যা ডিফারেন্স স্কলারশিপ ২০২৫’-এর আওতায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি কিক রিটেইলার ব্র্যান্ডের অর্থায়নে ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেসের সহায়তায় দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “শিক্ষা, গবেষণা ও বিপ্লবের চেতনায় দীপ্ত হোক বেরোবির আগামী” শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, প্রফেসর ড. রেজাউল হক ও উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের হয়। বাদ্যের তালে তালে শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে উপাচার্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।
বিকেলে আয়োজন করা হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সন্ধ্যায় স্বাধীনতা স্মারক মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণিল উৎসব।
What's Your Reaction?






