কাপ্তাইয়ে দুই বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দান সম্পন্ন

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Oct 11, 2025 - 13:11
 0  5
কাপ্তাইয়ে দুই বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দান সম্পন্ন

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দিনব্যাপী পৃথকভাবে এই দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয় কাপ্তাইয়ের ২নং রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি ঐতিহ্যবাহী রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার এবং ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দেবতাছড়ি মহাজনপাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে।

দিনভর এ উৎসবে অংশ নেন দূরদূরান্ত থেকে আগত অসংখ্য দায়ক-দায়িকা ও ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ভক্তরা। সকাল থেকে শুরু হয় ফুলপূজা, বুদ্ধপূজা, দেশ ও জাতির কল্যাণে সমবেত প্রার্থনা, পঞ্চশীল গ্রহণ এবং নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। এছাড়া বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার, কল্পতরু দান, ভিক্ষুদের পিণ্ড দানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন।

রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারের দানোৎসবে সভাপতিত্ব করেন বিহারাধ্যক্ষ উঃ পান্ডিতা মহাথের। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনিকায় মার্গ রাজগুরু ভদন্ত উঃ জ্ঞানাওয়াইংসা মহাথের (ডাকবাংলা পাড়া)। প্রধান ধর্মদেশনা প্রদান করেন উঃ নাইংদা ওয়াসা মহাথের (হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, বাঙ্গালহালিয়া)।
অনুষ্ঠানে গুরু ভান্তে স্মরণে সংঘ দান, প্রবজ্জ্যা গ্রহণ ও উপসম্পদা গ্রহণ সম্পন্ন হয়। উপস্থিত ছিলেন রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ক্যচিং মং মারমা, সাধারণ সম্পাদক থোয়াই সা প্রু (রুভেল) ও কোষাধ্যক্ষ আজাইমং মারমা (আজিম)।

অন্যদিকে, স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দানোৎসবে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ ক্ষেমিন্ডা মহাথেরো। প্রধান অতিথি ছিলেন নোয়াপাড়া বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত পূঞাবংশ মহাথেরো। আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ উঃ পামোক্ষা মহাথেরো এবং মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সুরেশ ভিক্ষু।

প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত সুমেধানন্দ মহাথেরো এবং বিশেষ স্বধর্ম দেশক ছিলেন ক্ষেমানন্দ ভিক্ষু। সংঘ বরণ করেন সন্তোষ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।
অনুষ্ঠানে প্রধান দায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা এবং বিশেষ দায়ক হিসেবে ছিলেন মংহ্লাচিং মারমা।

দুই স্থানে আয়োজিত এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে ছিল গভীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা আয়োজনে অংশ নেন শতাধিক ভিক্ষু ও অসংখ্য নারী-পুরুষ। আয়োজকদের মতে, কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বোচ্চ দানের মধ্যে অন্যতম। এর মাধ্যমে ভক্তরা সৎকর্মে অংশগ্রহণ ও ধর্মীয় পুণ্য অর্জনের সুযোগ পান।

৩২১ নং রাইখালী মৌজার হেডম্যান উসুয়ে সুয়ে চৌধুরী (মিশুক) বলেন, “নারানগিরি রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এই আয়োজনে যে শৃঙ্খলা ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি আয়োজক কমিটি ও সকল ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই।”

এদিকে ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আষাঢ়ি পূর্ণিমার পরদিন থেকে ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাব্রত পালন শুরু হয়, যা গত রবিবার শেষ হয়েছে। তিন মাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ বয়ে এনেছে। এর পর থেকেই শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব, যা চলবে আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত।”

তিনি আরও জানান, “এই দানকে ‘কঠিন চীবর দান’ বলা হয় কারণ তুলা থেকে সুতা তৈরি, রঙ করা, কাপড় বোনা ও দান—সব প্রক্রিয়া একদিনের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়। তাই একে ‘কঠিন চীবর দান’ বলা হয়।”

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow