গুইমারায় হামলার বিচার দাবিতে রোয়াংছড়িতে বিক্ষোভ

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং পরবর্তী সময়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি। এই পাশবিক ঘটনা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচারের দাবিতে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলার আদিবাসী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে এক বিশাল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শত শত ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে উসারা মহাথের লাইব্রেরির প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়া এক বর্ণাঢ্য র্যালি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে, যা পরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়।
খাগড়াছড়িতে এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে জুম্মদের উপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। এর জের ধরেই রোয়াংছড়িতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের শুরুতে জেএসএস নেতা অংশৈমং মারমার নেতৃত্বে একটি বিশাল র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উসারা লাইব্রেরীর মাঠ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী চসিংথোয়াই মারমার সঞ্চালনায় এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রোয়াংছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিলাল তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তারা গুইমারার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৩নং আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ভারতসেন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে। জুম্মদের উপর এই নির্যাতন আর মেনে নেওয়া হবে না।" হিল উইমেন্স ফেডারেশন বান্দরবান জেলা শাখার উলিসিং মারমা বলেন, "আমাদের বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দ্বিচারিতার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।"
এছাড়াও সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন তঞ্চঙ্গ্যা ছাত্র ওয়েলফেয়ার ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংশৈসাই মারমা, বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মেনিপ্রু মারমা, পিসিপি নেতা হ্লামংচিং মারমা এবং জন ত্রিপুরা। বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণ ও হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসাথে, ক্ষতিগ্রস্ত জুম্ম পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই প্রতিবাদ সমাবেশ এক গণজোয়ারে পরিণত হয়। অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভের আগুন এবং ন্যায়বিচারের দৃঢ় প্রত্যয়।
What's Your Reaction?






