চরভদ্রাসনে ২০ বছরেও পাকা হয়নি সড়ক, চরম দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

উন্নয়নের জোয়ারে ভাসে দেশ, কিন্তু ২০ বছর ধরে কাদাপানিতে ডুবে আছে একটি গ্রাম। এখানে একটি রাস্তা মানে শুধুই ইট-পাথরের ধ্বংসস্তূপ আর সীমাহীন দুর্ভোগ। হাজারো মানুষের স্বপ্ন আটকে আছে দুই কিলোমিটারের এই মরণফাঁদে। নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ফোটে, কিন্তু নির্বাচন শেষে তা মিলিয়ে যায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয় সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার। এটি ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গী গ্রামের এক নিদারুণ বাস্তবতার চিত্র, যেখানে একটি পাকা সড়কের জন্য দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলছে নীরব কান্না।
চর সুলতানপুর থেকে গাজিরটেক সড়কের ধোপাডাঙ্গী মৃধা বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই ইটের সলিং রাস্তাটি গত ২০ বছরেও সংস্কারের মুখ দেখেনি। ফলে এটি এখন চলাচলের প্রায় অযোগ্য। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রোগী এবং বৃদ্ধরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় নেতারা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে হাজির হলেও নির্বাচন শেষে আর তাদের দেখা মেলে না। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক রেষারেষির বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ৮০ বছর বয়সী প্রবীণ রফি মৃধা আক্ষেপের সুরে বলেন, "প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাসই দেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষাকালে রাস্তাটি পানিতে এমনভাবে ডুবে যায় যে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমনকি নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়াও সম্ভব হয় না।"
একই রকম হতাশা ঝরে পড়ল আলিয়া বেগমের কণ্ঠে। তিনি জানান, "সামান্য বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় ভ্যান, রিকশা বা অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যের বাড়ির উঠান দিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করতে হয়। রাস্তার ওপর সারাবছরই পানি জমে থাকে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় রোগী নিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সও গ্রামে ঢুকতে পারে না।"
এলাকাবাসীর এই চরম দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজিরটেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী বলেন, "এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। আমরা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা এলজিইডি ও জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, খুব শিগগিরই রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ শুরু হবে।"
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তার জানান, "যেসব রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো অনেক আগে এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো পুনরায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করব।"
এদিকে, এই সড়কটির বিষয়ে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুন বলেন, "নতুন অর্থবছরে আমরা বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি, সেই সঙ্গে এই সড়কটিকে সংস্কার করে সুন্দরভাবে চলাচল উপযোগী করা হবে।"
সরকারি কর্মকর্তাদের এই আশ্বাসে আরও একবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ধোপাডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দারা। তবে এবারের প্রতিশ্রুতি কি আলোর মুখ দেখবে, নাকি আগের মতোই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সেই উত্তর সময়ের হাতেই তোলা রইল।
What's Your Reaction?






