পরকীয়া ও ছিনতাইয়ের জেরে ২ বছর পর রহস্য উদঘাটন

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় দুই বছর আগে সংঘটিত অটোরিকশা চালক সায়েদুর রহমান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরকীয়া, অর্থলিপ্সা এবং ছিনতাইয়ের এক জটিল চক্রে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর, যখন ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা গ্রামের একটি ধানক্ষেতের পাশ থেকে সায়েদুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যে যেকোনো সময় তাকে হত্যা করে মরদেহ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই ঢাকা জেলার ওপর ন্যস্ত হয়।
পিবিআই প্রধানের দিকনির্দেশনায় ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদার তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ দল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে সদর আলী ওরফে সোহরাব (৪৭) এবং তার তথ্যের ভিত্তিতে মূল আসামি আলমগীরকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে তারা আদালতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে।
আসামিদের জবানবন্দি ও পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে আসে এক জটিল পারিবারিক ও অপরাধমূলক চক্রান্তের চিত্র। জানা যায়, সদর আলী, আলমগীর এবং জুয়েল নামে আরেক ব্যক্তি একই বাসায় পাশাপাশি রুমে বসবাস করত। এক পর্যায়ে সদর আলীর স্ত্রীর সাথে জুয়েলের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং জুয়েল আলমগীরের সহায়তায় সদর আলীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী সায়েদুর রহমানের স্ত্রীর সাথে সদর আলী ও আলমগীর দুজনেই পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করে।
এরই মধ্যে নগদ টাকার প্রয়োজনে সদর আলী, আলমগীর ও জুয়েল একত্রিত হয়ে সায়েদুর রহমানের অটোরিকশাটি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা গান শোনার কথা বলে সায়েদুরকে ফুসলিয়ে ধামরাইয়ের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে গামছা দিয়ে মুখ ও রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে অটোরিকশাটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদা বলেন, “দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত পরিচালনা করি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে এবং তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত নগদ টাকার লোভেই তারা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”
What's Your Reaction?






