নওগাঁর রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে অনুপস্থিত থাকায় বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পরিবারকে তালাবদ্ধ করার অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরে একটি পরিবারকে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় তাদের বাড়িতে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর এবং সদস্যদের তালাবদ্ধ করে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, হামলাকারীরা বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, দুটি বৈদ্যুতিক মিটার ভেঙে ফেলেছে এবং পানির লাইনও বন্ধ করে দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের রশিদুল ইসলামের বাড়িতে। এই ঘটনায় সোমবার দুপুরে রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রাণীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে।
রশিদুলের ভাই নিকিদুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই রেজাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে ভাবি দেড় বছর ধরে বাবার বাড়িতে ছিলেন। সম্প্রতি, ৭ই সেপ্টেম্বর তাদের বাবা আলেফ হোসেন মারা গেলে ভাবি দাফন-কাফনের জন্য শ্বশুরবাড়িতে আসতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাধা দেয়। দাফন শেষ হওয়ার পর তিনি আবার বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার খালাতো ভাই সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ওই দিন দুপুরে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়।
নিকিদুল আরও জানান, বিষয়টি মীমাংসার জন্য কথা হলেও হঠাৎ করেই রোববার বিকেলে তাদের জানানো হয় রাতেই সালিশ বৈঠক হবে। সন্ধ্যার পর কয়েকজন এসে বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য চাপ দেয়। তারা বৈঠকের তারিখ পরিবর্তনের অনুরোধ করলেও তা শোনা হয়নি।
নিকিদুলের অভিযোগ, সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় গ্রামের ইউনুস আলী, ফিরোজ হোসেন, আতোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর রাত তিনটার দিকে হামলাকারীরা আবার এসে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, মিটার ভেঙে ফেলে এবং পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। সবশেষে, তারা বাড়ির মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে।
রশিদুল ইসলাম জানান, পুলিশের উপস্থিতির সময়ই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সোমবার থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ এসে তার পরিবারকে মুক্ত করে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, গ্রাম্য মাতাব্বর ইউনুস আলী ও আতোয়ার হোসেন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, রশিদুলের ভাইয়ের স্ত্রীর বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রশিদুল ও তার লোকজন ৩৫ থেকে ৪০ জন ভাড়াটে লোক এনে গ্রামের সাইফুল ইসলামকে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে সাইফুল বগুড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনা সমাধানের জন্যই সালিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রশিদুল ও তার পরিবার সালিশে না আসায় গ্রামের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শুধু বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের অভিযোগ, বাড়িতে হামলা, মিটার ভাঙচুর বা তালাবদ্ধ করার ঘটনা রশিদুলেরাই ঘটিয়ে তাদের ওপর মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে।
রাণীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবলু পাল জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তালাবদ্ধ পরিবারটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাদী মামলা দায়ের করলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জুলফিকার আলীও পরিবারটিকে মুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
What's Your Reaction?






