কাজী বেলালের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে নিবন্ধনের অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে কথিত নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো. বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে নিবন্ধনসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, অর্থের বিনিময়ে বাল্যবিয়ে নিবন্ধন করানোই তার মূল পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছে। এতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না অনেকে, বরং মামলা জটে ভুগছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলার কচুয়া পশ্চিমপাড়ার প্রবাসী হান্নান সরদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার হিনা ২০২২ সালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় পারিবারিকভাবে কাশিমপুর ইউনিয়নের সানাপাড়ার আকাশ হোসেনকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে নিবন্ধন করেন কাজী বেলাল হোসাইন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় যৌতুকের দাবিতে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে হিনার পরিবারের দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
সম্প্রতি উপজেলার চকমনু গ্রামের রেজাউল ইসলাম লিখিত অভিযোগে জানান, কাজী বেলাল সরকারিভাবে নির্ধারিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে একাধিক বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন। বিয়ের সময় পক্ষপাতদুষ্টভাবে মোহরানা নির্ধারণ করেন এবং টাকার বিনিময়ে এসব বিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা জাল ডুপ্লিকেট বই ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অবৈধভাবে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করছেন। অনলাইন জুয়া ও প্রতারণার মাধ্যমেও তিনি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
রেজাউল ইসলাম আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেও পরে গোপনে টাকার বিনিময়ে ওইসব বিয়েই কাজী বেলাল রেজিস্ট্রি করেন। তার এমন অনৈতিক কাজের কারণে বহু সংসারে অশান্তি তৈরি হয়েছে।
এই বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাজী বেলাল হোসাইনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও কাজী সমিতির সভাপতি এটিএম রেজাউল ইসলাম জানান, “একজন কাজীর সীমা তার নিজ এলাকা হলেও, বেলাল হোসাইন অন্য এলাকার বাসিন্দা হয়েও সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের ছত্রছায়ায় ২০১২ সালে কাশিমপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে কাজীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই তিনি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, “জেলা ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনই তার দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হতে থাকবে।”
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
What's Your Reaction?






