টানা বর্ষণে টেকনাফে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি দুই হাজারের বেশি পরিবার

হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
Jul 7, 2025 - 23:25
 0  1
টানা বর্ষণে টেকনাফে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি দুই হাজারের বেশি পরিবার

টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা ও মানবিক সংকট। কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ১৪৬ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে থেমে থেমে ভারি বর্ষণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। অনেক এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে, ফলে দরিদ্র মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ও নিচু এলাকা ঘেরা টেকনাফের ছয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অন্তত ৫০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আটটি, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি, টেকনাফ পৌরসভার সাতটি, সদর ইউনিয়নের ছয়টি, সাবরাং ইউনিয়নের আটটি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসরত অধিকাংশ পরিবারই এখন পানিবন্দি।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, বিশেষ করে পূর্ব রঙ্গিখালী এলাকাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “খাল দখলের কারণে পানি নামতে পারছে না। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালাচ্ছি।”

রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, “ঘরের ভেতরেই কোমর পানি। রান্না করতে পারছি না। ছোট ছোট বাচ্চারা কষ্টে আছে। এমনকি কিছু জায়গায় সাপও ঢুকে পড়েছে। এটা তো একরকম ছোটখাটো বন্যা।”

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া ও মাঝের পাড়া এলাকার বাসিন্দারাও একই দুর্ভোগের শিকার। মাঝের পাড়ার বাসিন্দা বুশরা খাতুন বলেন, “ঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে, ভেতরে পানি পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে কী করবো বুঝতেছি না। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, চারদিকে শুধু পানি আর কাদা।”

সাবরাং ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল সামাদ বলেন, “পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকেই রান্না করতে পারছে না, কেউ কেউ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এখানকার মানুষ এখন সাহায্যের আশায় আছে।”

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, “আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরাতে মাইকিং করা হয়েছে।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, “ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্রও খুলে দেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, টেকনাফে বর্ষা মৌসুম মানেই জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ। খাল দখল, অনিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি বসতি এবং দুর্বল অবকাঠামো এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। তাদের মতে, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ এখন জরুরি। তবে দীর্ঘমেয়াদে খাল উদ্ধার ও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। স্থায়ী সমাধানের জন্য এখনই প্রয়োজন পরিকল্পিত ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow