বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
Aug 19, 2025 - 23:06
 0  0
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮ তম আবর্তনের দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কার ও ১৭ জন শিক্ষার্থীর শোকজ নোটিশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাঁরা আগামী রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার মধ্যে প্রশাসন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন। 

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও বিভাগীয় প্রধান বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা “বহিষ্কার নয়, সমাধান চাই”, “অবিলম্বে ক্লাসে ফিরতে চাই”, “ন্যায় চাই, অন্যায় নয়”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস ”, “তদন্ত রিপোর্টের যৌক্তিক বিশ্লেষণ চাই” সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ব্যবহার করেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বহিষ্কারাদেশ অন্যায় এবং তদন্ত রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ ও অযৌক্তিক। তারা দাবি করেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি যে বহিষ্কারের মতো কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এছাড়া প্রায় এক মাসের বেশি সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষা জীবনে যে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তার ক্ষতিপূরণ প্রশাসন বা বিভাগ কখনো দিতে পারবে না।

লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সিফাত বলেন, “আমাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে আমরা ১৯ ব্যাচের সাথে কথা বলতে যায়। তখন প্রক্টরিয়াল বডি এসে বিষয়টা দেখেন। এরপর প্রশাসন সেটিকে মনে করে র‍্যাগিং। কিন্তু সেখানে র‍্যাগিং হয়নি। আমাদের সহপাঠী রিফা ওর ক্লাসের নিজেস্ব গ্রুপে বলেছিলো যে আমরা সবাই এক থাকতে হবে ও সবাই একই কথা বলব। এবং সেখানে বলে দিয়েছিল যে এটা ওর ব্যক্তিগত মতামত। এই কারণে কি ওকে বহিষ্কার করতে পারে? 

আরেক সহপাঠী এবং আরাফাত তার নিজের এলাকার ছোট বোন হিমিকে রাগ করে বলেছিলো যে আমার সামনে আর আসিছ না। শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে হিমি এই কারণে কুবি ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু হিমি ওর ব্যক্তিগত কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছে যা গণমাধ্যমে হিমি ও তাঁর বাবা স্বীকার করেছে। 
তবুও কেন আরাফতকে বহিষ্কার করা হলো? তাই আমরা মনে করি এই বহিষ্কার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। 
আমরা এর প্রতিবাদেই আজ মানববন্ধন করছি।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া মানববন্ধনে বলেন, ‘১৮তম আবর্তনের একজন ছেলে ও একজন মেয়েকে ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তারা ১৯তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীকে নাচতে বাধ্য করেছে। অথচ বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়, কারণ তাদের একটি নাচের প্রোগ্রাম ছিল। একজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেছে এবং তার বাবাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এরপরও প্রশাসন এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে জবাব চাই, কেন তাদের বহিষ্কার করা হলো? আমরা প্রমাণ দিয়েছি যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা কাউকে নাচতে বাধ্য করেনি, বরং যারা নেচেছে তারা নিজেরাই স্বেচ্ছায় নেচেছে। তাছাড়া সালাম না দেওয়ার কারণে র‍্যাগ দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা কখনোই ১৯তম ব্যাচের ক্লাসে যায়নি, শুধু অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল। এ অবস্থায় ‘তারা কেন ১৯তম ব্যাচের ক্লাসে গেল’, এই প্রশ্নে প্রশাসনের আগে জাস্টিফিকেশন দেওয়া উচিত ছিল। যদি তদন্ত হয়, তবে পুরো বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে। একপাক্ষিক অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

স্মারকলিপির বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, তারা আমাদের কাছে একটি স্মারক লিপি দিয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি আগাবে। যেহেতু তারা দাবি জানিয়েছে দাবি জানাতেই পারে। এ বিষয়ে প্রশাসন অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, আমার হাতে এখনো স্মারকলিপি পৌছায়নি। স্মারকলিপিটি আগে পড়ে বুঝতে হবে তাদের দাবিটি কি তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব।

উল্লেখ্য, ১৪ আগষ্ট র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আরাফাত ও রিফা সানজিদাকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার ও হলে থাকার সিট বাতিল করে । একই ঘটনায় সরাসরি জড়িত আরও ১৭ জন শিক্ষার্থীকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow