ছাত্রাবাসে ফাটল, ঝুঁকিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা: আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ৭০ শিশু শিক্ষার্থী
বান্দরবানের থানচি বাজার (মডেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা আবাসিক ছাত্রাবাস ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। ছাঁদ থেকে পানি পড়া, সৌচাগার ভেঙে যাওয়া, দুর্বিষহ দুর্গন্ধসহ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই ভবনে থাকা ৭০ কোমলমতি শিক্ষার্থী। দীর্ঘ ১৪ বছরেও ভবনটির কোনো সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থানচি উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৫০ গজ পশ্চিমে অবস্থিত ভবনটির ছাঁদে বড় ফাটল, দেয়ালে ভেজা দাগ ও মরিচা ধরা লোহার গাঁথুনি ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নির্দেশ করে। ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর ও টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একটি কক্ষ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ছাত্রাবাসে থাকা পঞ্চম শ্রেণির উখ্যাইসিং মারমা, এম্যাচিং খিয়ান, চতুর্থ শ্রেণির লুশান ত্রিপুরা ও তৃতীয় শ্রেণির ভেলি খুমি বলেন, "বৃষ্টির পানি ছাঁদ দিয়ে পড়ে। সৌচাগারের দরজা ভেঙে গেছে। দুর্গন্ধের কারণে ঠিকমতো খেতেও পারি না। সহপাঠিকে চৌকিদার রেখে টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়। রাতে ঘুমাতেও ভয় লাগে, যদি হঠাৎ ভবনটা ধসে পড়ে!"
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি এই ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে স্থানীয় ঠিকাদার আনিসুর রহমান সূজনকে নির্মাণ কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, অযোগ্য নির্মাণশ্রমিক ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে ওই সময়ের নির্মাণকাজে। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদ বীর বাহাদুর ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল ভবনটি উদ্বোধন করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যসাচিং মারমা বলেন, "২০১২ সাল থেকে ১৪ বছর আমি ছাত্রাবাসটি পরিচালনা করছি। ছাঁদ থেকে পানি পড়ে, একটি কক্ষ বসবাসের অযোগ্য। ৮০ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে ৭০ জন থাকছে, ১০ জন জায়গার অভাবে বঞ্চিত। অনেকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। কিছুদিন আগে ইউএনও ও এলজিইডির প্রকৌশলী পরিদর্শন করে গেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন সংস্কারের।"
আবাসিক শিক্ষক উশৈমং মারমা বলেন, "গত ২-৩ বছর ধরে রাতে আমরা আতঙ্কে থাকি, ভবন ধসে পড়তে পারে। শুক্র-শনি দিনে ঘুমাই, রাতে চোখে ঘুম নেই।"
এ বিষয়ে এলজিইডির লামা উপজেলা প্রকৌশলী (থানচির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আবু হানিফ বলেন, "জুন মাসের শেষ দিকে থানচির দায়িত্ব পেয়েছি। ভবনটি পরিদর্শন করে সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকের হোসেনকে প্রাক্কলন তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, প্রাক্কলন পেলে চলতি বছরের মধ্যেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, "আমি নিজেই সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
স্থানীয়দের অভিযোগ, দরিদ্র ও দুর্গম এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি আবাসিক ছাত্রাবাসে বছরের পর বছর ধরে কোনো সংস্কার না হওয়ায় জীবন-মরণ প্রশ্নে পরিণত হয়েছে তাদের থাকা-খাওয়া। দ্রুত সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
What's Your Reaction?






