র্যাগিং কতটা ভয়ংকর একজন নবীনের জীবনে

“কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় দিনটি হয়তো আমার পুরো জীবনকে প্রভাবিত করে দেবে — ঠিক যেভাবে বিষ ছড়িয়ে পড়ে শরীরের প্রতিটি কোষে।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা এই কথাগুলো একজন নবীন শিক্ষার্থীর।
সদ্য ভর্তি হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবার ছেড়ে বহু দূর, অপরিচিত শহরে নতুন জীবন শুরু করার চেষ্টা। কিন্তু সেই শুরুটাই হয়ে উঠেছে বিভীষিকাময়, যার নাম র্যাগিং।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে এক তরুণ এসেছেন কুমিল্লায়। বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখার। যদিও ছেলেটি বাবার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাননি, তবুও সংগ্রাম করে পৌঁছেছেন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মায়ের সাপোর্ট, নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কিছু টাকায় ভর্তি হতে এসেছিলেন। কিন্তু ক্লাসের তৃতীয় দিনেই ভেঙে পড়েছেন।
অপরাধ? ক্লাসে টি-শার্ট পরে যাওয়া! এজন্য তিন ঘণ্টা ধরে "পরিচয়পর্বের" নামে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে, হুমকি দেয়া হয়েছে— এমনকি প্রস্তাব করতে বাধ্য করা হয়েছে এক অপরিচিত ‘আপু’কে। আর না করায় পরিবারকে নিয়ে গালাগালও শুনতে হয়েছে।
এই শিক্ষার্থী নিজেকে ইন্ট্রোভার্ট বলেই পরিচয় দেন। কারো সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না। নতুন পরিবেশ, একাকিত্ব, হোমসিকনেস— সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে না পেরেই মন খারাপ ছিল, তার ওপর এই নির্যাতন যেন তাকে পুরোপুরি ভেঙে দেয়।
তিনি লিখেছেন “মনে হচ্ছিল সিঙ্গারাটা ওনার মুখে মারি।”
এই বক্তব্য শুধু ক্ষোভ নয়, তা এক ধরণের নিঃশব্দ প্রতিরোধ। পরে মেসে ফিরে কেঁদেছেন। বড় বোনের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করলে তিনি বলেছিলেন, “তুমি আর পড়াশোনা করবে না এখানে, সেকেন্ড টাইম প্রস্তুতি নাও।” ছেলেটি এখন বাসায় ফিরছেন। হয়তো ফিরবেন না আর কখনোই।
এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর শত শত নবীন একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। কেউ প্রতিবাদ করেন না, কেউ প্রতিবাদ করেও অপমানিত হন। অথচ এই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ছিল জ্ঞান অর্জনের, কিন্তু তারা যেন প্রতিদিন এক অসম যুদ্ধের ময়দানে পড়ে থাকেন।
র্যাগিং কোনো বন্ধুত্ব তৈরির প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি সহিংসতা মানসিকভাবে ধ্বংস করার এক নিষ্ঠুর উপায়।
What's Your Reaction?






