রাজশাহীর পদ্মা চরে গুলি করে স্পিডবোটের ইঞ্জিন খুলে নিল সন্ত্রাসীরা

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে বৈধ ইজারা নেওয়া বালুমহলের খেয়া ঘাটে সন্ত্রাসীদের গুলির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় রবিবার (৬ জুলাই) গভীর রাতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে দুইটি স্পিডবোট ভাঙচুর ও একটি স্পিডবোটের ইঞ্জিন খুলে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়রা জানান, ওই রাতেই তারা গুলির শব্দ শুনেছেন। সোমবার (৭ জুলাই) সকালে খেয়াঘাটে গিয়ে দেখতে পান দুটি স্পিডবোট ভাঙচুর করা হয়েছে এবং একটি স্পিডবোটের ইঞ্জিন খুলে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর মৌজার ২৪ একর আয়তনের একটি বালুমহল বাংলা ১৪৩২ সনে মেসার্স সরকার ট্রেডার্সকে ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এসএম এখলাস বালু উত্তোলন ও বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
খেয়াঘাটে কর্মরত ম্যানেজার বেলাল হোসেন জানান, বালু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করতে হলে একাধিক স্থানে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু চাঁদা না দেওয়ায় রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
চোখে দেখা প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াজেদ সিকদার বলেন, “ভোরে মাছ ধরতে এসে শুনি দুইটা স্পিডবোট ভাঙচুর হয়েছে, আর একটি বোটের ইঞ্জিন খুলে নিয়ে গেছে।”
স্পিডবোটের চালক সালাম বিশ্বাস বলেন, “সেই রাতে হঠাৎ করে তিনটি নৌকায় করে প্রায় ৩৫-৪০ জন সন্ত্রাসী এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তারা দুটি বোট নদীর মাঝখানে নিয়ে গিয়ে ভাঙচুর করে এবং একটি বোটের ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যায়।”
গ্রাম পুলিশের এক সদস্য জানান, “রাত সাড়ে তিনটার দিকে গুলির শব্দ শুনি। জানালা দিয়ে দেখি তিনটি নৌকায় অনেক লোক ছুটোছুটি করছে। পরে ড্রেজারের চালকেরা এসে আমার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।”
এ ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম সরকার। তিনি বলেন, “আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে কাজ করছি। কিছুদিন আগে কাকন বাহিনী নামে একটি দল খাল এন্টারপ্রাইজ নামে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করে। আমরা রাজি না হওয়ায় হয়তো এই হামলা হয়েছে।”
ঘটনার পরপরই যৌথভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে নৌ পুলিশ ও বাঘা থানা পুলিশ।
নৌ পুলিশের চারঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ূন রশীদ বলেন, “এপারের বালু বৈধভাবে উত্তোলন করে ঈশ্বরদীতে বিক্রি করা হয়। সেই বিক্রি আটকাতেই হয়তো দৌলতপুর এলাকার লোকজন এ হামলা করেছে। তাদের এলাকাতেও নাকি গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে।”
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম আছাদুজ্জামান জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে এবং নৌ পুলিশসহ থানা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীপথে চলাচল ও বালুবহন এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?






