নিলামে বিক্রি হলো খোকসার শতবর্ষী জুবিলী ব্যাংক, কালের গর্ভে বিলীন এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সাক্ষী জুবিলী ব্যাংক নিলামে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি ১১২ বছরের দীর্ঘ পথচলা শেষে তার কার্যক্রম পুরোপুরি গুটিয়ে নিল, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও ইতিহাস সচেতন মানুষদের মধ্যে গভীর মর্মবেদনার সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটির স্থাবর সম্পত্তি সম্প্রতি খোকসা-জানিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক নিলামে বিক্রি করা হয়। এই নিলামে একাধিক দরদাতা অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্য দিয়ে শতবর্ষী এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ভৌত কাঠামোর মালিকানা পরিবর্তিত হলো।
১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল 'খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড' নামে এই ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর বাজারেই ছিল এর প্রধান ও একমাত্র শাখা। যদিও ঢাকায় একটি অফিস ছিল, কিন্তু পৃথিবীর আর কোথাও এর কোনো শাখা খোলা হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ৭০ বছর ব্যাংকটি সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স লাভ করে। এর এক বছর পর, ১৯৮৭ সালে, এর নাম পরিবর্তন করে 'জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড' রাখা হয়।
ব্যাংকটির দীর্ঘ ইতিহাসে মালিকানা এবং কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক উঠেছে। বিশেষ করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের এই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকাটা ছিল সবচেয়ে বড় বিতর্কের কারণ। এই কলঙ্কজনক অধ্যায় এবং ব্যাংকিং আইন ও লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের মতো বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত ব্যাংকটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
আদালতের এই রায়ের পর থেকেই ব্যাংকটির অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর অংশ হিসেবেই সম্প্রতি ব্যাংকের স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলে চূড়ান্তভাবে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলো। জুবিলী ব্যাংক শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ছিল না, এটি ছিল খোকসার মানুষের কাছে গর্ব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। এই ব্যাংকের নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কেবল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরই অবসান ঘটেনি, বরং এই অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও যবনিকাপাত হলো। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা তাদের এক ঐতিহাসিক গৌরবকে হারিয়েছেন।
What's Your Reaction?






