ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ঐতিহ্যের মিশেলে কাপ্তাইয়ে জ্যোতিপাল মহাথেরোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার দুর্গম রাইখালী ডংনালা শাক্য নন্দ বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত উ. জ্যোতিপাল মহাথেরোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো ভক্ত ও পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে বিপুল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দাহক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
দুদিনব্যাপী এই মহতী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী প্রয়াত ভান্তের কফিন নিয়ে পরিবেশন করা হয় বিশেষ ‘সইং নৃত্য’। পাশাপাশি আয়োজিত হয় বিশেষ পূজা-অর্চনা ও সমবেত প্রার্থনা। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী ‘ডং বাজী’র (এক ধরনের বিশেষ আতশবাজি বা অগ্নিসংযোগ পদ্ধতি) মাধ্যমে প্রয়াত এই প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষুর মরদেহ দাহ করা হয়। এই বিশেষ ধর্মীয় উৎসব চাক্ষুষ করতে রাইখালীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে জনস্রোত নামে বিহার প্রাঙ্গণে।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ভদন্ত উ. জ্যোতিপাল মহাথেরো পরলোক গমন করেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহ্য মেনে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাঁর মরদেহ কফিনে করে এক মাসেরও বেশি সময় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মারমা সমাজে গুণী ভিক্ষুদের প্রয়াণের পর কিছুদিন অতিবাহিত করে ঘটা করে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা ‘সোয়ান দাহ’ অনুষ্ঠান আয়োজন করার রীতি প্রচলিত রয়েছে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন রাজ নিকায় মার্গের ষষ্ঠ মহাসংঘ নায়ক ও চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরো। প্রধান আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাঙ্গাহালিয়া ডাক বাংলা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ঞানাওয়াইন্সা মহাথেরো।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ধর্মদেশনা প্রদান করেন রাজস্থলী নাইক্য-বান্দায়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ক্ষেমাচারা মহাথেরো, রাইখালী নারানগিরি বড় পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত নাইন্দাওয়াইন্সা মহাথেরো, বান্দরবান রাজবিলা উদালবনিয়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত পাইন্দাওয়াইন্সা মহাথেরো এবং রাইখালী পূর্ব কোদালা ধর্ম রাজ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ওয়াইন্না মহাথেরো।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি ২৯৯ নং আসনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দীপেন দেওয়ানের প্রতিনিধি হিসেবে উথোয়াইমং মারমাসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ বিহারের ভিক্ষু সংঘের হাতে চীবর তুলে দেন।
ভদন্ত উ. জ্যোতিপাল মহাথেরোর প্রয়াণে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া থাকলেও, তাঁর শেষ বিদায়ের এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন শাক্য নন্দ বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণকে এক পুণ্যময় মিলনমেলায় পরিণত করেছিল।
What's Your Reaction?
রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ