সহপাঠীদের চোখের জলেই লেখা হলো জায়ান হত্যার প্রতিবাদের ভাষা
স্কুলের মাঠে আজ কোলাহল নেই, নেই শিশুদের চিরচেনা দুরন্তপনা। আছে শুধু পিনপতন নীরবতা আর বুকভরা হাহাকার। যে বয়সে কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে আসার কথা, সেই বয়সেই নিথর হয়ে ফিরতে হয়েছে সাত বছরের শিশু মোহাম্মদ জায়ান রহমানকে। সহপাঠী থেকে শুরু করে অভিভাবক - সবার চোখের কোণেই আজ অশ্রুর বান।
এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হলো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা। রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে জায়ান হত্যার দ্রুত বিচার ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে পাকুড়িয়া এলাকার জাবেদ পারভেজ মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে।
মানববন্ধনে উপস্থিত জায়ানের মা কামরুন্নাহার সিনথিয়ার কান্না যেন থামছিলই না। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, “আমার বুকের ধনকে যারা কেড়ে নিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই। আমার ছেলের হত্যার এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যেন আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়। কোনো মা যেন আমার মতো এমন যন্ত্রণায় না পোড়ে।”
মায়ের এই আর্তনাদে উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। শোকের ছায়া মুহূর্তেই ক্ষোভে রূপ নেয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বাড়ির অদূরে একটি ঝোপের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় শিশু জায়ানের মরদেহ। ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন কিংবা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য ও নিহত শিশুর বড় চাচা মিটু মোল্যা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চার দিন পার হয়ে গেল, অথচ পুলিশ এখনো কাউকে ধরতে পারল না। জায়ানের পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।”
রবিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাবেদ পারভেজ মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মাজহারুল আনোয়ার। তিনি বলেন, “এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী আজ শোকে পাথর। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই প্রতিবাদ থামবে না।”
সহকারী প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন, মমিনুল ইসলাম, নিহতের ছোট চাচা হাবিব মোল্যা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং নিহত শিশুর দাদী রেহানা বেগম। বক্তারা প্রশাসনের কাছে আলটিমেটাম দিয়ে দ্রুত তদন্ত শেষ করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “পুলিশ ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করছে। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সত্য উদঘাটনে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মানববন্ধনে নিহত শিশু জায়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ছোট্ট জায়ান চলে গেছে না ফেরার দেশে, কিন্তু তার সহপাঠী আর স্বজনদের একটাই দাবি - ‘খুনিদের বিচার চাই’।
What's Your Reaction?
কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর ) প্রতিনিধিঃ