আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে গ্রেফতার

মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি, রংপুরঃ
Aug 24, 2025 - 20:45
 0  4
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে গ্রেফতার

জুলাই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এবং শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফুজ্জামান আরিফ অবশেষে ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। দেশ ছেড়ে পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না তার। শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনটি হত্যাকাণ্ড এবং দুটি হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংসতার জন্যই মূলত কুখ্যাতি অর্জন করেন এসি আরিফুজ্জামান। রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীর মতে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরের জিলা স্কুল মোড় থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ক্যাপ্টেন ব্যাকোলজি মোড়ে পৌঁছালে এসি আরিফের নেতৃত্বে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করার আগে সরাসরি নির্দেশ দেন এবং নিজেও গুলি চালান। আন্দোলনে আহত ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাহদি হাসান অনিক জানান, "আন্দোলন দমাতে শুরু থেকেই এএসপি আরিফ অত্যন্ত মারমুখী ছিলেন। তার আগ্রাসী ভূমিকা আমরা স্পষ্ট দেখেছি।"

তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়াও রংপুর তাজহাট থানায় দায়েরকৃত একই মামলার তিনি ৪ নম্বর আসামি। শুধু তাই নয়, কোতোয়ালি থানায় কলা ব্যবসায়ী শহীদ মেরাজুল ইসলাম ও সবজি ব্যবসায়ী শহীদ সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলাতেও তিনি যথাক্রমে ২১ ও ১৬ নম্বর আসামি। তার বিরুদ্ধে আরও রয়েছে কলেজ শিক্ষার্থী জিম এবং পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীকে হত্যাচেষ্টার দুটি পৃথক মামলা। পুলিশ সূত্র আরও জানায়, কলা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলায় তিনি বাদীর কাছ থেকে কৌশলে হলফনামা নিয়ে চার্জশিট থেকে নিজের নাম কেটে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ঘটনার পর থেকেই আরিফুজ্জামানকে নিয়ে আলোচনা চলছিল। গত বছর ৫ আগস্ট তাকে রংপুর থেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এপিবিএনে বদলি করা হয়, কিন্তু এরপর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশেষে, শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় বিএসএফ-এর হাতে ধরা পড়েন আরিফ। হাকিমপুর চেকপোস্টে তার পরিচয়পত্র যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের পলাতক কর্মকর্তা। বর্তমানে তাকে ভারতের স্বরূপনগর থানায় রাখা হয়েছে।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (হেডকোয়ার্টার্স) হাবিবুর রহমান জানান, আরিফকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, "যেহেতু তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন, তাই সেখানকার আইনি প্রক্রিয়া প্রথমে দেখা হবে। এরপর দুই দেশের মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হবে। আমরা তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার সমস্ত নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।"

বহু প্রতীক্ষিত এই গ্রেফতারের খবরে ভুক্তভোগী পরিবার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং তারা দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow