নেই সংযোগ সড়ক,২৭ লাখ টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

মো: মনিরুজ্জামান আগৈলঝাড়া(বরিশাল) প্রতিনিধি
Sep 29, 2025 - 22:58
 0  7
নেই সংযোগ সড়ক,২৭ লাখ টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন এক সেতু। কিন্তু কাছে গেলেই সেই ভুল ভাঙবে। কারণ সরকারের ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুতে ওঠার জন্য কোনো সড়ক নেই, আছে কেবল দুটি নড়বড়ে বাঁশের মই। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন এলাকার গল্প নয়, বরিশাল আগৈলঝাড়ার বাশাইল গ্রামের করুণ বাস্তবতা। যেখানে একটি সেতু উন্নয়নের বদলে বয়ে এনেছে চরম জনদুর্ভোগ।

উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুটি এখন এলাকাবাসীর কাছে উপকারের বদলে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় শিক্ষার্থী, বয়স্ক নাগরিক এবং নারীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পার হতে হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, তবুও যেন দেখার কেউ নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণে সেতু নির্মাণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। বর্ষায় সেতুর নিচ পানিতে ডুবে গেলে পারাপার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর শুষ্ক মৌসুমে একমাত্র ভরসা এই বাঁশের মই।

বাশাইল কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, "মই বেয়ে ব্রিজে উঠতে গিয়ে আমাদের প্রায়ই বিপদে পড়তে হয়। অনেক সময় পা পিছলে পানিতে পড়ে বই-খাতা ও পোশাক ভিজে যায়। এটা আমাদের জন্য এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা।"

স্থানীয়রা জানান, এই সেতু দিয়ে বাইসাইকেল, ভ্যান বা মোটরসাইকেলের মতো যানবাহন পার করার কোনো উপায় নেই। ফলে কৃষিপণ্য পরিবহন বা জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় ২০২৩ সালের এপ্রিলে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স পাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মার্চে সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, "যদি মই দিয়েই পার হতে হয়, তাহলে এত টাকা খরচ করে এই সেতুর দরকার কী ছিল? আমরা দ্রুত সংযোগ সড়ক চাই।"

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন সাহা জানান, "টেন্ডারটি আমার যোগদানের আগে হয়েছে। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা নেব।"

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বাদল হোসেনের বক্তব্য আরও বিস্ময়কর। তিনি বলেন, "আমার প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও আমি নিজে কাজটি করিনি। যারা করেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সড়কের কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করছি।"

ঠিকাদারের অবহেলা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সরকারের একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এখন এলাকার মানুষের কাছে 'গলার কাঁটা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে এই দুর্ভোগ পোহানো মানুষের একটাই দাবি- "আর কোনো অজুহাত নয়, অবিলম্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে আমাদের এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি দিন।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow