চালের ডিও লেটার ঘুরছে টাকায়, প্রবারণা উৎসব ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ

অনুপম মারমা, থানচি প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Sep 27, 2025 - 14:18
 0  4
চালের ডিও লেটার ঘুরছে টাকায়, প্রবারণা উৎসব ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ
২২ সেপ্টেম্বর ইউএনও কার্যালয় হতে প্রবারনা ডিও লেটার গ্রহন করছেন রেমাক্রী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে মেম্বার য়ংহ্রাপ্রু মারমা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় আসন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা উৎসব (আশ্বিনী পূর্ণিমা) ও শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভক্তদের আহার্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া চাল বিহার কমিটির হাতে পৌঁছানোর পরিবর্তে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বিহার পরিচালনা কমিটির নেতারা।

উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর থানচি উপজেলার ১১০টি বৌদ্ধ বিহারের প্রতিটিতে ৫০০ কেজি করে মোট ৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং দুটি দুর্গাপূজা মণ্ডপের জন্য আরও ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, চালগুলো সরাসরি বিহারে পৌঁছে ৬ অক্টোবর প্রবারণা উৎসবের দিনে রান্না করে ভক্তদের আপ্যায়নের কথা ছিল।

কিন্তু থানচি উপজেলা ভিক্ষু সংঘের সভাপতি উ. ইউসারাদা মহাথেরো জানান, উপজেলায় প্রকৃতপক্ষে ৩৬টি বৌদ্ধ বিহার আছে, ১১০টি নয়। “আমরা চাল পাইনি, বরং অনেকে নগদ টাকা পেয়েছেন বলে শুনেছি। এতে ভক্তদের আহার্য সংকট তৈরি হবে,” তিনি বলেন।

করুণা শিশু সদনের পরিচালক উ. গাইন্দামালা মহাথেরো অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের বিহারে অনাথ শিশু আছে। চাল পেলে তাদের খাওয়ানো যেত। কিন্তু আমাকে একজন দায়ক ১৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছে উৎসবের খাবারের জন্য। পরে জানলাম এ টাকা দিয়েছেন চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা।”

একইভাবে জিনিঅং পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ. ইউজবাসা থেরো দাবি করেন, তিনি চাল বা টাকা কিছুই পাননি। তবে অংপুং পাড়া ও নিয়াবুট পাড়ার কয়েকজন জানান,বৌদ্ধ বিহার ক্যাংঘর নেই ভিক্ষু ও নেই তবে  আমাদেরকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো যথাক্রমে ৬ হাজার ৫০০ ও ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন প্রবারনায় ফানুস উড়ানোর খরচের জন্য।

থানচি সদর শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুমন দত্ত জানান, চালের ডিও লেটার সংগ্রহে ১ হাজার টাকা ঘুষ এবং খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার স্বাক্ষর আনতে আরও ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। পরে তারা ৫০০ কেজি চাল বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন।

এ বিষয়ে পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ও বিএনপি সাবেক সভাপতি খামলাই  ম্রো বলেন, “শুধু বৌদ্ধ বিহার নয়, ম্রো সম্প্রদায়ের ক্রামা ধর্মীয় গ্রাম গুলোতেও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে সবার জন্য সমানভাবে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন চাল পরিবর্তে টাকা দিলে ও স্থানীয় ভাবে বাজারে চালের দাম প্রতি মে: টন ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। 
রেমাক্রী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জানান, ২০১৬ সাল থেকে সরকারিভাবে প্রবারনা উদসবের বরাদ্ধকৃত চাল বা টাকা এ পর্যন্ত কিছু পাই নি। শুধু মাত্র চেয়ারম্যান নিজস্ব দান করেছে বলে কোন সময় ৫ হাজার করে দিতেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জানান,রেমাক্রী ইউনিয়নের ১১ টি বৌদ্ধ বিহার ও ক্যাংঘর রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে থানচি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অংপ্রু ম্রো বলেন, “গ্রাম বেশি হলেও বরাদ্দ কম। তাই চালের পরিবর্তে টাকায় ভাগ করে দিতে হয়েছে।”
রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান ও  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুইশৈথুই মারমা মুঠোফোন বন্দ থাকায় বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয় নি।

তবে উপজেলা পিআইও মসফিকুর রহমান দাবি করেন, “প্রত্যেক সভাপতির হাতে হাতে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ চাল না পেয়ে থাকে, তবে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় খাদ্য গুদামের তত্ত্বাবধায়ক নতুন কুমার চাকমা বলেন, গত সোমবার হতে শুক্রবার পর্যন্ত ২ টি বৌদ্ধ বিহার ও ১টি দুর্গা মন্ডপের ডিও লেটার হাতে পেয়েছি। 

উল্লেখ্য, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার মেহেদী হাসান ফারুকের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, চাল বরাদ্দের হিসাব নিরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু থানচিতে চালের ডিও লেটার ঘিরে যে টাকার লেনদেন চলছে, তা স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow