মাগুরায় হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে আগাম পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত কৃষকরা, বাম্পার ফলনের আশা
পৌষের হাড়কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে মাগুরার মাঠে মাঠে চলছে আগাম পেঁয়াজ চাষের ধুম। মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর—জেলার এই চার উপজেলার কৃষিপল্লী এখন কর্মমুখর। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে পেঁয়াজের চারা হাতে কৃষকদের জমিতে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য এখন নিত্যদিনের।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শ্রীপুর উপজেলার নাকোল গ্রামের কদমতলা উত্তর গোবিন্দপুর মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এক ব্যস্ত চিত্র। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, আবার কেউ সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণে মগ্ন।
স্থানীয় কৃষক হারেজ আলী জানান, “গত চার দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই, শীতের তীব্রতাও অনেক বেশি। কিন্তু সংসারের কথা চিন্তা করে ঘরে বসে থাকার উপায় নেই। মাটি, পানি আর কাচিই আমাদের ভরসা, তাই হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করেই মাঠে নেমেছি।”
একই মাঠে কথা হয় কৃষক মো. রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এক মাস আগেই বীজতলায় চারা তৈরি শুরু করেছিলেন। এবার তিনি ২০ বিঘা জমিতে আগাম পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। প্রতিদিন ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের প্রত্যেককে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। তার মতে, এবারের চাষে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তিনি ৩০ লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। আগামী চৈত্র মাসেই এই পেঁয়াজ ঘরে উঠবে বলে তিনি আশাবাদী।
নাকোল গ্রামের আরেক কৃষক ইকরাম মোল্লা বলেন, “এ মৌসুমে আমি ১৫ বিঘা জমিতে ‘লালতীর’ ও ‘সুখসাগর’ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করছি। এতে খরচ হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা, আর আশা করছি আয় হবে ৬-৭ লাখ টাকা। তবে অতিরিক্ত কুয়াশা হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাই নিয়মিত সার ও সেচ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছি।”
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. তাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলার চার উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে আগাম পেঁয়াজ চাষে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর জেলায় মোট ৮৫৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৫০ হেক্টর, শালিখায় ২০৫ হেক্টর, মাগুরা সদরে ১৪০ হেক্টর এবং মহম্মদপুরে ১৬৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি এবং প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি।”
শীতের জড়তা কাটিয়ে মাগুরার কৃষকরা এখন নতুন স্বপ্নে বিভোর। আগাম পেঁয়াজ চাষে ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্য পেলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।
What's Your Reaction?
বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মাগুরাঃ