ঙাঁফাখুম জলপ্রপাত থেকে ৭২ ঘণ্টা পর নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

অনুপম মারমা, থানচি প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Nov 16, 2025 - 18:26
 0  43
ঙাঁফাখুম জলপ্রপাত থেকে ৭২ ঘণ্টা পর নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

বান্দরবানের থানচি উপজেলার ঙাঁফাখুম জলপ্রপাত থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর পর্যটক মো. ইকবাল হোসেন (২৪)–এর মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। রবিবার সন্ধ্যা ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ স্টেশনের ডুবুরি দলের প্রধান রহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে জলপ্রপাতের গভীর পানির নিচে থাকা কুরুম নামের গুহার ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে গোসলে নামার পর থেকে ইকবাল হোসেন নিখোঁজ ছিলেন। গভীর গুহার কুরুমের ভেতরে প্রবল স্রোতে আটকে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন বলে ধারণা করা হয়।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি সদস্য, স্থানীয় গাইড ও বোটচালকদের সহায়তায় শনিবার সকাল থেকে টানা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৭ জনের একটি পর্যটকদল ঢাকা থেকে আলীকদম হয়ে তিন্দু গ্রোপিং পাড়া আসে। সেখান থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই ও নিবন্ধিত গাইড ছাড়া তারা ঙাঁফাখুমের উদ্দেশে রওনা দেন। স্থানীয় একটি রিসোর্টে অবস্থান করে তারা জলপ্রপাত এলাকায় ঘুরতে যান। গোসলে নামার একপর্যায়ে ইকবাল হোসেন দুর্ঘটনার শিকার হন।

থানচি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা তরুণ বড়ুয়া বলেন, “ঙাঁফাখুম জলপ্রপাত পাথুরে ও তীব্র স্রোতপূর্ণ এলাকা। অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া সেখানে ভ্রমণ, ছবি তোলা বা গোসল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যটকদের গাইড ছাড়া না যাওয়ার জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানাই।”

ডুবুরি দলের প্রধান রহিদুল ইসলাম জানান, “গভীর গুহার কুরুমের ভেতরে মরদেহ আটকে ছিল। তিনজন ডুবুরি অক্সিজেন নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করে ৮ ঘণ্টার মধ্যে মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হই।”

থানচি থানার ওসি নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন,
“উপপরিদর্শক মো. রিয়াজুলসহ পুলিশের ছয় সদস্য মরদেহ নিয়ে থানায় ফিরছেন। থানচি থেকে ঙাঁফাখুম পর্যন্ত যাতায়াতে প্রায় ১০ ঘণ্টা পায়ে হাঁটার প্রয়োজন হয়। মরদেহটি সোমবার সকালে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, “পর্যটকরা প্রশাসনকে অবহিত করেননি। তাঁরা অনুমোদিত গাইডও নেননি। প্রশাসন কেবল তিন্দু পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। রেমাক্রি খুম, নাফাখুম ও ঙাঁফাখুমে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তারা কীভাবে সেখানে গেলেন—তা তদন্ত করা হচ্ছে।”

২০২২ সালের ২০ অক্টোবর রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। ওই সময় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)–এর তৎপরতা বৃদ্ধি ও জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছিল।

২০২৪ সালের ২ এপ্রিল থানচি বাজারে দিনের আলোয় সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow