সৎ মায়ের নির্যাতনেই চিরঘুমে শিশু সুমাইয়া

দাফনের জন্য প্রস্তুত তিন বছরের শিশু বিবি কুলসুম সুমাইয়ার নিথর দেহ। কিন্তু গোসল করাতে গিয়েই আঁতকে উঠলেন স্বজনেরা। ছোট্ট শরীরের গলায় আর কানে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন! একটি সাধারণ মৃত্যু মুহূর্তেই রূপ নিলো এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সন্দেহে। আর এই হৃদয়বিদারক ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে শিশুটিরই সৎ মা শিউলি আক্তার।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এই ঘটনায় সোমবার (১১ আগস্ট) অভিযুক্ত সৎ মা শিউলিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনার জেরে শিশুটিকে হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার এক মর্মস্পর্শী নাটকের ইতি ঘটলো এর মাধ্যমে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী ফয়সাল আহমদের মেয়ে সুমাইয়া থাকতো তার সৎ মা শিউলি আক্তারের সাথে চৌমুহনীর একটি ভাড়া বাসায়। শনিবার দুপুরে তুচ্ছ কোনো কারণে শিশু সুমাইয়ার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। সৎ মা শিউলি তাকে মারধরের পর গোসল করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
বিকেলে শিউলি দাবি করে, শিশুটি ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা গেছে। এরপর প্রবাসী স্বামীকে ফোন করে এবং ডাক্তার ডেকে এনে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা করে। স্বামীর পরামর্শে ওইদিন রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি শরীফপুরের খানপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু পরদিন সকালে শিশুটির মরদেহ গোসল দেওয়ার সময় স্থানীয়দের চোখে পড়ে যায় তার গলা ও কানের আঘাতের চিহ্ন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান জানান, "৯৯৯ থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শিশুটির গলায় ও কানে আঘাতের চিহ্ন থাকায় আমরা তার সৎ মা শিউলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি।"
ওসি আরও জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত শিশুর দাদী মারজাহান বেগম বাদী হয়ে শিউলিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একটি নিষ্পাপ শিশুর এমন করুণ পরিণতিতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
What's Your Reaction?






