সাধু সেজে অর্ধকোটি টাকা লোপাট, টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো মামলার আসামি গ্রাহকরা

মোঃ নাজমুল হোসেন,জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুরঃ
Aug 10, 2025 - 20:40
 0  1
সাধু সেজে অর্ধকোটি টাকা লোপাট, টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো মামলার আসামি গ্রাহকরা

সাধুর বেশে যে এমন সর্বনাশ হতে পারে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি পিরোজপুরের নেছারাবাদের গাজিয়া গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো। একসময়কার গার্মেন্টসকর্মী নৃপেন মন্ডল (৫২) সাধু সেজে গ্রামের হতদরিদ্র ও অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর ‘সমিতি পরিচালক’ পরিচয়ে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু গল্পের সবচেয়ে মর্মান্তিক মোড় হলো, সেই টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এখন প্রতারক নৃপেনের দায়ের করা লুটের মামলাতেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

এই ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রতারক নৃপেনের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গাজিয়া গ্রামের মৃত নগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে নৃপেন একসময় ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গ্রামে ফিরে মাথায় তিলক লাগিয়ে তিনি সাধু বনে যান। ধীরে ধীরে সবার আস্থা অর্জন করে হঠাৎ করেই নিজেকে ‘আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’র পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রামের দিনমজুর থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের কাছ থেকে এককালীন ও মাসিক আমানত হিসেবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করে ফুলেফেঁপে ওঠেন তিনি।

কয়েক মাস আগে ওই সমিতি লাপাত্তা হলে এবং গ্রাহকরা মামলা করলে নৃপেন জেলে যান। জামিনে বেরিয়ে বাড়িতে ফিরলে পাওনাদাররা তাদের সঞ্চিত অর্থ ফেরত চান। ঠিক তখনই দেনা থেকে বাঁচতে নৃপেন পিরোজপুর কোর্টে গ্রামের ইউপি সদস্য সুজিত বৈরাগীসহ ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বিরুদ্ধেই তার বসতঘর লুটের এক সাজানো মামলা দায়ের করেন।

৬৫ বছর বয়সী সবিতা মজুমদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। হাঁস-মুরগি পালন আর ক্ষেত-খামার করে ছেলে আর আমি মিলে সাড়ে চার লাখ টাকা জমিয়েছিলাম ওর কাছে। এখন টাকা তো দিচ্ছেই না, উল্টো আমাদের নামেই মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।"

একই গ্রামের যুবক অর্নব ঠাকুর বলেন, "নৃপেন গ্রামের অনেক সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়েছে। আমাদের মেম্বার সুজিত বৈরাগী সবার টাকা ফেরতের অনুরোধ করায়, নৃপেন তাকেসহ পাওনাদারদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।"

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য সুজিত কুমার বৈরাগী বলেন, "মানুষের টাকা ফেরত দিতে বলায় সে আমার নামেও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এটা চরম অন্যায়।"

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নৃপেন মন্ডল বলেন, "ওরা আমার ঘরবাড়ি লুট করেছে, তাই মামলা করেছি। আমি কোনো সমিতির পরিচালক নই, বেতনে চাকরি করতাম। মালিক জেলে, আমি কী করবো?"

নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি জানান, "এখানে আমার কিছু করার নেই। ভুক্তভোগীদের নৃপেন মন্ডলকে আসামি করে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।"

এই ঘটনায় একদিকে সর্বস্বান্ত ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, অন্যদিকে মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে গিয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow