বেগমগঞ্জে ২৬টি মন্ডপে দুর্গা পূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রস্তুত হয়েছে ২৬টি পূজা মন্ডপ। শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে প্রতিমা শিল্পীদের লোকসান, আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, প্রশাসন বলছে পূজা হবে আনন্দঘন ও নিরাপদ পরিবেশে।
বেগমগঞ্জের ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী শহর সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় ২৬টি মন্ডপে আতংকের মধ্যেই শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এরই মধ্যে পুজা মন্ডপগুলো সেজেছে বর্নিল সাজে। মন্ডপ সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে শেষ মুহূর্তের প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে জোরেশোরে।
শনিবার থেকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পুরোদমে শুরু হয়েছে দৃর্গোৎসব। এবার চৌমুহনীর শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর নিত্যানন্দ বিগ্রহ (ইসকন) মন্দির, শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর চন্দ্র আশ্রম মন্দির ও শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দিরসহ বেশীর ভাগ পুজা মন্ডপে সিসি ক্যমরা স্থাপন সহ স্থানীয় প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে প্রতিটি মন্দিরে। কারন বিগত ২০২১ সালের ১৫ই অক্টোবর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল চৌমুহনীসহ পুরো বেগমগঞ্জে। পঞ্জিকা মতে, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পঞ্চমী তিথিতে সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) পূর্বাহ্ন ৯টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সপ্তমী তিথিতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে নবপত্রিকা স্নান ও স্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অষ্টমী সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টার মধ্যে মহাষ্টমীবিহিত পূজা ও ৮টা ২৯ মিনিট থেকে ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি । বিকাল ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে সন্ধি পূজা। ৬টা ৩১ মিনিটে বলিদান ও সন্ধি পূজা সমাপন হবে। বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী পূজা, ১০টা ১৫ মিনিট থেকে বেলা ১২টা ২৯ মিনিটের মধ্যে কুমারী পূজা, বলিদান, হোম কর্মাদি হবে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শারদীয় দুর্গা পূজা ঘিরে বর্তমানে সাজ সাজ রব নোয়াখালীর চৌমুহনীসহ বেগমগঞ্জের পূজা মন্ডপগুলোতে। উপজেলার ২৬টি মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমার রঙের তুলিতে প্রাণ পাচ্ছে দুর্গা মায়ের মূর্তি। তবে প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে এই কাজ করলেও এবার খরচের তুলনায় আয় কম, ফলে লোকসানে পড়েছেন তারা। প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন,এবার মাটির দাম, রঙের দাম- সব কিছুই বেশি। আগের মতো অর্ডারও তেমন পাই নাই, এতে লোকসানে পড়তেছি। তবুও মায়ের জন্য করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তারা বলছেন, দেশের চলমান পরিস্থি’তিতে নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন করতে পারবো কিনা তাতে আমরা অনেকটা শঙ্কিত। বিগত ২০২১ সালে জেলার চৌমুহনীতে কয়েকটি পূজা মন্ডপে এবং মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় এখনো আমরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছি। আনন্দঘন ও নিরাপদে পূজা উদযাপন করতে প্রশাসনের কাছে জোর নিরাপত্তার দাবি করেন উপজেলা ও জেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্রদেব এর সমাধী মন্দির পরিদর্শন করেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ শামসুল আরোফীন। এ সময় আরো আরো উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধিনায়ক মোঃ রিফাত ও বিডিআর ক্যাম্পাসেন্ট ফোর্সের কর্মকর্তাগণ। শারদীয় দূর্গাপুজা উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর নির্দেশে বেগমগঞ্জ উপজেলা ও চৌমুহনী পৌরসভা হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল পূজা মন্ডপে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে শুক্রবার চৌমুহনী দক্ষিন বাজার রাম ঠাকুর আশ্রম মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শামীমা বরকত লাকি।
বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যান ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বাবু কামাক্ষা চন্দ্র দাস এর সভাপতিত্ব ও চৌমুহনী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মহসিন আলম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক জহির উদ্দিন হারুনসহ বেগমগঞ্জ উপজেলা ও চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শারদীয় দুর্গাপূজায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং সহ সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরি¯ি’তি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পূজা উদযাপন কমিটির ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে বেগমগঞ্জ মডেল থানা প্রাঙ্গণে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিটন দেওয়ান এর আয়োজনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বেগমগঞ্জের অতিরিক্ত সার্কেল আ.ন.ম ইমরান খান, ওসি তদন্ত মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, র্যাবের ডি.এ.ডি শাহনেওয়াজ,চৌমুহনী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ(ওসি) খোকন ঘোষ, জেলা জামায়াতের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নাছিমুল গনি চৌধুরী মহল, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আহসান উল্যাহ, বেগমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক রুস্তম আলী, চৌমুহনী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির, পূজা উদযাপন ফ্রন্ট বেগমগঞ্জের আহবায়ক শংকর মজুমদার সহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, বিভিন্ন মন্ডপে পর্যাপ্ত র্যাব,পুলিশ ও আনসার মোতায়েন, স্বেছাসেবক নিয়োগ, নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ওই সভায়
বেগমগঞ্জ মডেল থানা অফিসার ইনচাজ(ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন কোথাও কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যেন পূজা হয়,আমরা সে ব্যবস্থাই নিয়েছি। পূজা মন্ডপ দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, আমরা এসেছি মূলত, মাকে দেখার জন্য, মায়ের যে আগমনী বার্তা, তা আমাদের মাঝে আনন্দ জাগিয়ে তোলেছে। মায়ের আগমন মানেই আনন্দ। মায়ের আগমনে চাই শুধু নিরাপদ পরিবেশ। এবার অনেক সুন্দর মন্ডপ হয়েছে। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি, খুব ভালোই লাগছে। ভালোই ভাবে পূজা শেষ করতে পারলেই পূর্ণ স্বার্থকতা পাবো। আনন্দঘন ও নিরাপদে পূজা উদযাপন করতে প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় ও বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নোয়াখালীর আহবায়ক রনি কুমার দাস। তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে পূজা শেষ করতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সভা-মতবিনিময় করেছি এবং প্রতিটি মন্ডপে গিয়ে সহযোগিতা দিয়েছি। আশা করছি এবার নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন হবে।
পঞ্জিকা মতে, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পঞ্চমী তিথিতে সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) পূর্বাহ্ন ৯টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সপ্তমী তিথিতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে নবপত্রিকা স্নান ও স্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অষ্টমী সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টার মধ্যে মহাষ্টমীবিহিত পূজা ও ৮টা ২৯ মিনিট থেকে ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি। বিকাল ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে সন্ধি পূজা। ৬টা ৩১ মিনিটে বলিদান ও সন্ধি পূজা সমাপন হবে। বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী পূজা, ১০টা ১৫ মিনিট থেকে বেলা ১২টা ২৯ মিনিটের মধ্যে কুমারী পূজা, বলিদান, হোম কর্মাদি হবে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, নোয়াখালীর প্রতিটি পূজা মন্ডপেই এখন শেষ মুহূর্তের প্র¯‘তি চলছে। প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি মন্ডপ সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে শেষ মুহূর্তের প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে জোরেশোরে। নিরাপত্তা ও উৎসবের আবহে দুর্গা পূজা যেন হয়ে ওঠে সার্বজনীন আনন্দের উৎসব, সেটাই এখন প্রত্যাশা সবার।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান জানান, অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি আরো বলেন, এবারের দৃর্গাপুজা নির্ভিঘ্নে পালনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ডপে মন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা(আইনশৃঙ্খলা) বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বড় মন্ডপগুলোতে সেনাবাহিনীসহ অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় টহলে থাকবে। এ বছর দূর্গাপুজায় মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, ডিবি পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ক্রাইম জোনগুলোতো সিসি-ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, কোথাও কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। আমরা প্রতিটি মন্ডপে নজর রাখছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যেন পূজা হয়, সে ব্যবস্থাাই নিয়েছি এবং আনন্দঘন ও নিরাপদ পরিবেশে পূজা করতে বেগমগঞ্জের ২৬টিসহ জেলার ১৮৭টি মন্ডপের জন্য ইতিমধ্যে ৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
What's Your Reaction?






