১৯ বছরেও নারী শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চার সুবিধা গড়ে উঠেনি কুবির ব্যায়ামাগারে
প্রশিক্ষক ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সংকটে কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগার। একাধিকবার স্থান পরিবর্তন হলেও সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা ঘাটতি কাটেনি। ট্রেইনার না থাকায় ভুলভাবে ব্যায়াম করে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া এখনো পর্যন্ত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শরীরচর্চার কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে নারী শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যায়ামাগারের সুবিধা থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসংলগ্ন একটি কক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগারটির উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের পরপরই এটি তৎকালীন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর দখলে চলে যায়। পরে ২০২১ সালের শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে ব্যায়ামাগারটি স্থানান্তর করা হয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায়। তবে বর্তমানে ফটকসংলগ্ন ঐ স্থানে আবারো ব্যামাগারটি স্থানান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যামাগারের স্মিথ মেশিন, মাল্টি-জিম, এক্সারসাইজ সাইকেল, ওয়েট বেঞ্চ, ট্রেডমিল, বারবেল, ওয়েট প্লেট, ডাম্বেল ও ওয়াটার কুলারের মধ্যে মাল্টি-জিম ও এক্সারসাইজ সাইকেল আংশিক, আর ট্রেডমিল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, অধিকাংশ অমেরামতযোগ্য। এছাড়া ব্যায়ামাগারে রাবার ফ্লোরিং, সেফটি কলার, ডাম্বেল র্যাক, ইলেকট্রিক ট্রেডমিল, স্ট্যান্ডার্ড অলিম্পিক বারবেল ও বাউন্সিং ওয়েট প্লেটসহ প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জামই নেই।
এদিকে ছেলে শিক্ষার্থীদের ব্যায়ামের ব্যাবস্থা থাকলেও গত ১৯ বছরে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়নি সুযোগ-সুবিধা। এমনকি নারী শিক্ষার্থীরা জানেনও না ব্যায়ামাগার সম্পর্কে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যায়ামাগারের জন্য বরাদ্দ কক্ষটি ছোট হওয়ায় একই সময়ে চার-পাঁচজনের বেশি শিক্ষার্থী ব্যায়াম করতে পারেন না। বিকল সরঞ্জামের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং আশপাশে জঙ্গল থাকায় মশা ও দুর্গন্ধের সমস্যাও রয়েছে। এছাড়াও প্রশিক্ষক না থাকায় সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম করতে পারছেন না।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাফর হাবিব রাজা বলেন, "বর্তমান জায়গাটি ছোট হওয়ায় একসঙ্গে তিন-চারজনের বেশি ব্যায়াম করতে পারে না। সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষকের অভাব ছাড়াও আশপাশে জঙ্গল আর মশার উপদ্রবও সমস্যা তৈরি করছে। অনেকে চান সময় বাড়ানো ও জায়গা পরিবর্তন করা হোক।"
বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেঘলা আক্তার বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারে শিক্ষার্থীদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য একেবারেই নেই। সরঞ্জাম কম হওয়ায় অনেকে জানেও না যে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ট্রেইনারের ব্যবস্থাও নেই, তাই মেয়েদের জন্য আলাদা সেকশন ও সুবিধা থাকা উচিত।"
ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ নন্দী বলেন, "জিম সকাল ৯টায় খোলা হয়, যা ক্লাসের সময়ের সঙ্গে মিলে যায় ফলে অনেকেই যেতে পারে না। ট্রেইনার না থাকায় অনেকে ভুলভাবে ব্যায়াম করছে, যা ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি পুরোনো সরঞ্জামের পরিবর্তে নতুন সরঞ্জাম, ট্রেইনার নিয়োগ এবং সময়সূচি সকাল ৬টা থেকে ১১টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণের দাবি জানান।"
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিফ ফিজিশিয়ান ডা. মাহমুদুল হাসান খান (শোহাগ) বলেন, "ব্যায়াম নিয়মিত ও সঠিক প্রক্রিয়ায় করা উচিত। অতিরিক্ত ওজন তোলা বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যায়াম করলে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে এমন রোগী পাওয়া গেছে, যারা অতিরিক্ত ওজন তোলার কারণে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তাই বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের পরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মনিরুল আলম বলেন "যারা এখানে কাজ করেন, তাদের আমরা সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম দিতে পারি। তাই বর্তমানে ব্যায়ামাগারের সময়সূচি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। সারাদিন তো ক্লাস থাকে না, তাই শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ব্যায়াম করতে পারবে। আর ট্রেইনার নিয়োগের বিষয়টি প্রশাসনই দেখবে।"
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, "আমরা দ্রুত নতুন ক্যাম্পাসে চলে যাবো। সেখানে বিশাল বড় জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুল হচ্ছে। এমন বড় জিমনেসিয়াম অনেক ইউনিভার্সিটিতে নেই। আশা করি নতুন ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষাথীদের ব্যায়ামগারের সমস্যার সমাধান হবে।"
What's Your Reaction?
আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ