বোনের কিডনিতে নতুন জীবন ভাইয়ের

রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় কোন সম্পর্ক নেই—এই প্রবাদটিকেই যেন বাস্তবে রূপ দিলেন পিরোজপুরের হাসিনা বেগম। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অসুস্থ ছোট ভাইকে নিজের একটি কিডনি দিয়ে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিলেন তিনি। ভাই-বোনের ভালোবাসার এই বিরল ও আত্মত্যাগের ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানিসাফা এলাকায়, যা এখন সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রশংসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, ধানিসাফা এলাকার বাসিন্দা হাসান বিশ্বাস (৩৮) দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। জীবন সংকটাপন্ন ভাইয়ের জন্য কিডনি দাতার সন্ধান করতে গিয়ে যখন পরিবারটি প্রায় দিশেহারা, তখনই এগিয়ে আসেন আপন বড় বোন হাসিনা বেগম (৪৫)। কোন দ্বিধা ছাড়াই তিনি নিজের একটি কিডনি ছোট ভাইকে দান করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন शस्त्रোপচার সম্পন্ন করে। বড় বোন হাসিনার দেহ থেকে কিডনি নিয়ে ছোট ভাই হাসানের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
হাসিনা বেগম স্থানীয় ধানিসাফা ইউনিয়নের একজন নির্বাচিত ইউপি সদস্য এবং দুই সন্তানের জননী। ভাইয়ের প্রতি তার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ত্যাগ সামাজিক দায়িত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে।
কিডনি দানকারী বড় বোন হাসিনা বেগম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, "আমার আদরের ছোট ভাইটা চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছিল। তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হচ্ছিল না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমার একটি কিডনি দিয়ে হলেও ভাইকে বাঁচাবো। আল্লাহ্র রহমতে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তাকে সুস্থভাবে ফিরে পেয়ে আমার যে কী ভালো লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার ভাই এখন শঙ্কামুক্ত। সকলের কাছে আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া চাই।"
হাসিনা বেগমের স্বামী লিটন মিয়া জানান, "প্রায় সাত মাস আগে আমার শ্যালক হাসানের কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর থেকে ওর দুটি কিডনিই ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ভাইয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের দুজনের এই ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের পরিবার আরও একবার প্রমাণ করলো যে রক্তের বাঁধন কতটা শক্তিশালী। ভাই-বোন দুজনেই এখন সুস্থ আছে। আমরা চাই, তারা দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।"
এই ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে হাসিনা বেগমের সাহসিকতা ও ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সবাই। এটি কেবল একটি কিডনি দান নয়, বরং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক জীবন্ত উদাহরণ, যা আগামী দিনেও বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
What's Your Reaction?






